জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও প্রস্ততি নিচ্ছে। প্রশ্ন আসছে নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা নিরপেক্ষভাবে তা পালন করেন কি না? আশার কথা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
দৈনিক সংগ্রামে বুধবর প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের সময় আইনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে অটল থাকার নির্দেশও দেন তিনি। গত বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইউএনওদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন। সিইসি বলেন, আমরা অনেক সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারি না। কিন্তু যেসব জাতি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তারাই প্রকৃত অর্থে সভ্য। আমাদেরও আইনের সংস্কৃতিকে চর্চায় আনতে হবে। আমরা ‘রুল অব ল’ চাই, কিন্তু ‘রুল বাই ল’ নয়, অর্থাৎ শাসনের হাতিয়ার হিসেবে আইন নয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন প্রয়োগ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনকালীন যেকোনো দায়িত্ব আইনসঙ্গতভাবে, নিরপেক্ষভাবে ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে।” উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, “নির্বাচন পরিচালনায় সমন্বয় একটি বড় বিষয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। এ দায়িত্ব মূলত আপনাদের হাতেই।”
সিইসি দৃঢ়ভাবে জানান, “কেউ যেন কোনো চাপ বা প্রভাবের কাছে নতি স্বীকার না করেন। নির্বাচন কমিশনও কোনো বেআইনি নির্দেশ দেবে না, কারও অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। সমস্ত নির্দেশনা প্রচলিত আইন অনুযায়ীই দেওয়া হবে।” যেকোনো সংকট দেখা দিলে তা শুরুতেই মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, সমস্যা দেখা দেওয়ার পর নয়, বরং শুরুতেই তা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। সময়মতো উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
প্রশিক্ষণকে পেশাগত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, “শেখার কোনো শেষ নেই। এই প্রশিক্ষণ থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা মাঠপর্যায়ে কাজে লাগাতে হবে এবং সহকর্মীদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে দিতে হবে।” তিনি আরও জানান, আরপিও সংশোধনের পর প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল হালনাগাদ করা হবে। কোনো বিষয় বাদ পড়লে অনলাইনের মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণ করা হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতায় অনেকেরই ঘাটতি থেকে যায়। আমাদের আইনের সংস্কৃতিকে চর্চায় আনতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন প্রয়োগ করতে হবে।
আমরা মনে করি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউএনওদেরকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে যে বার্তাটি দেয়ার চেষ্টা করেছেন তা সময়োপযোগী ও প্রণিধানযোগ্য। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তার অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা মনে করি সবার সম্মিলিত চেষ্টায় তা সফল হবে। দেশে হাসিনা মার্কা নির্বাচন না হয়ে একটি সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক । আমরা আশাবাদী হতে চাই, জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া হবে। তাই আমরা নিরপেক্ষভাবে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন আশা করি।