জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো এক প্রস্তাব পাস না হওয়ায় উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠেছে। যা জানা যাচ্ছে তা এক কথায় ভয়ংকর। নিরাপত্তা পরিষদে গাজা যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দৈনিক সংগ্রামসহ পত্রিকান্তরে শুক্রবার বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে সদস্যদের মধ্যে ১৪টি ভোট প্রস্তাবের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিলে তা পাস হয়নি। এটা গাজা যুদ্ধ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ ভেটো। সর্বশেষ প্রস্তাবটির খসড়ায় গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছিল। সে সঙ্গে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া এবং ত্রাণ সরবরাহ করতে দেয়ার কথাও বলা ছিল। এর বিপরীতে খসড়া প্রস্তাবটিতে গাজায় জিম্মি অবস্থায় থাকা ইসরাইলিদের অবিলম্বে সম্মানজনক মুক্তির শর্তও ছিল। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত ১০ সদস্যদেশ এ খসড়া প্রস্তাব তুলেছিল। স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছে। বাকি ১৪ সদস্য দেশ খসড়া প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে।
গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলা সংঘাতের প্রায় ২ বছর হতে চলেছে। এ সময়ের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের শর্ত যুক্ত করে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত ছয়টি প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে ভেটো দিয়েছে ওয়াশিংটন। ওয়াশিংটনের এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে হামাস। একে ‘গণহত্যার অপরাধের সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে জড়িত থাকা’ বলে চিহ্নিত করেছে।
ভোটাভুটির আগে জাতিসংঘে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিনা মার্কুস লাসেন নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘গাজায় দুর্ভিক্ষ এখন নিশ্চিত একটি বিষয়। অনুমান নয়, ঘোষণা নয়, এটা এখন নিশ্চিত।’ ক্রিস্টিনা আরও বলেন, গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান বাড়িয়েছে ইসরাইল। এতে বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
এ মানবিক বিপর্যয়, এ মানবিক ব্যর্থতা আমাদের আজকের এ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। আমরা মনে করি যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিরপরাধ মানুষগুলোর কথা চিন্তা না করে ইসরাইল তোষণ নীতির কারণে এ রকম একটি ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার কারণে গাজায় আরো ধ্বংসলীলা ও মৃত্যু দেখতে হবে বিশ্বকে। বিশ্ব বিবেকের কাছে আমাদের প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রকে তার মনোভাব পরিবর্তনের জন্য আন্তরিকভাবে কিছু বলা বা করা হয়েছে কি? ট্রাম্প প্রশাসনের হাতের পুতুল হয়ে বিশ্ববিবেক আর কত দিন বাধা হয়ে থাকবে যুদ্ধবাদী জায়নবাদীদের পক্ষে? জানা যাচ্ছে, গাজা ও কাতারের ঘটনায় চলতি মাসের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের কর্মসূচি বদলে যাচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়টি বৈশ্বিক কূটনীতির কেন্দ্রে উঠে এসেছে। এ প্রভাব পড়তে পারে উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও অন্যান্য সম্মেলনেও।
সূত্রে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইল এ প্রতিক্রিয়া হিসেবে হামলা শুরু করলে আহত ও নিহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ে। গাজায় ক্রমাগত ইসরাইলী হামলায় ৬৫ হাজার গাজাবাসী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক লাখ। এ ক্ষুদ্র এলাকাটিতে এত লোকের প্রাণহানি একটি বিপর্যয়কর ঘটনা বটে। তার পরও ইহুদীবাদী রাষ্ট্রটি থেমে নেই। ইসরাইল এখন গাজা দখলের উন্মত্ততায় মেতেছে। তা গাজাবাসীর বাঁচা-মরা তথা অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। কাতারে ইসরাইলী হামলার পর মুসলিম বিশ্বের ৬০টি দেশের বৈঠকে যে আহ্বান ধ্বনিত হয়েছিল তার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। জাতিসংঘ প্রস্তার ভেস্তে দেয়ার পরিণাম নিয়ে দেশগুলোর আশু করণীয় রয়েছে। আমরা সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।