ফিলিস্তিন বিষয়ে সম্প্রতি পত্রিকান্তরে দুটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। একটিতে বলা হয়েছে, গাজার অনাহারী মানুষের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। ফলে সেখানে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর থেকে দীর্ঘ হচ্ছে। অপর খবরে বলা হয়েছে, ফ্রান্স ও বৃটেনের পর কানাডাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা ভাবছে। আমরা গাজায় ইসরাইলী বর্বর হামলা অব্যাহত রাখার নিন্দা জানাই। সে সাথে মনে করি শিল্পোন্নত দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা ভাবছে তা একটি ভাল খবর হলেও তাদেরকে গাজাবাসীর কষ্ট লাঘবে কাজ করা উচিত। শুধু স্বীকৃতি দিয়ে সমস্যার সমধান হবে না।
বৃহস্পতিবার পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গাজার অনাহারী মানুষের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। ফলে সেখানে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাঁচার আকুতি জানিয়ে গাজাবাসী সাহায্যের আহ্বান জানাচ্ছেন। অনেক মাকে দেখা গেছে তার অনাহারী সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ইউটিউব শর্টস, ফেসবুক রিলে এসে আহাজারি করছেন। তার ওপর ইসরাইলী আগ্রাসনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৬০,০৩৪ জন ফিলিস্তিনী প্রাণ হারিয়েছেন। মৃত্যুর এমন খবরাখবর সামনে আসছে এমন এক সময়ে, যখন গাজার অভ্যন্তরে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, মানবিক অবরোধ এবং অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যে খাদ্য সহায়তার খোঁজে বের হওয়া অসহায় জনগণের ওপরও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলী বাহিনী।
এতে বলা হয়, গ্লোবাল হাঙ্গার পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি জানিয়েছে, গাজার বেশিরভাগ এলাকায় খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্ভিক্ষের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গাজা সিটির অভ্যন্তরে তীব্র অপুষ্টির হার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। জুলাইয়ের প্রথমার্ধেই ২০,০০০-এরও বেশি শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৩০০০ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। গাজার নাসের হাসপাতালের শিশু ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ আল-ফাররা বলেন, শিশুরা আসছে হাড় আর চামড়ার অবয়বে ঢাকা শরীর নিয়ে। তাতে মাংস নেই, চর্বি নেই। শুধু খালি দেহ। এটা শুধু তীব্র অপুষ্টি নয়, এটা ধ্বংস। তিনি বলেন, অপুষ্টির কারণে শিশুর স্নায়ুবিক বিকাশ ব্যাহত হয়, ফলে ভবিষ্যতে লেখাপড়ার সমস্যা, বিষণ্নতা ও উদ্বেগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
অপর খবরে বলা হয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কানাডার । যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো একই পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে কানাডা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এ কথা বলেছেন। এ নিয়ে গত কয়েক দিনে উন্নত সাত দেশের জোট জি-৭-এর তিন সদস্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানালো। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গাজায় মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা অসহনীয় এবং দ্রুত এর অবনতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা কানাডার রয়েছে বলে জানান কার্নি। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। এর মধ্যে রয়েছে, আগামী বছরে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে হামাসকে ছাড়া নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। সে সঙ্গে এ ভূখণ্ডকে নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। কানাডার এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি হামাসকে পুরস্কৃত করা। এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানান। এরপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও জানান, ইসরাইল কিছু শর্ত না মানলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়া হবে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যদেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১৫০টি দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আমরা মনে করি ফিলিস্তিন ও গাজার অবস্থান জোরদার করার জন্য এ স্বীকৃতির প্রয়োজন রযেছে। কিন্তু একই সাথে গাজার পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথাও তাদেরকে ভাবতে হবে। তারা সবাই মিলে চাপ সৃষ্টি করলে ভাল কিছু হতেও পারে, হতে পারে যুদ্ধ বিরতি। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই।