ফিলিস্তিনের গাজা ইসরাইলী হামলায় এখন ধ্বংসস্তূপ। বিগত দু’বছরে সেখানে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে ৬৬ হাজারের বেশি গাজাবাসীকে হত্যা করেছে ইসরাইলী পাষণ্ডরা। গাজাবাসীরা এখন চরম খাদ্যকষ্টে রয়েছে। সেখানে অনাহারে মারা গেছে শিশুসহ শত শত মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে ত্রাণ নিয়ে রওনা হয়েছে সুমুদ ফ্লোটিলা নামের জাহাজ বহর। আর সে বহরে হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে ইসরাইল। এ হামলার নিন্দার ভাষা নেই। আমরা মনে করি, এ হামলা শুধূমাত্র গাজাবাসীর ওপরই নয়, এটি মানবজাতির ওপর হামলা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। গাজামুখী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরাইলী হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এটিকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়েছে তুরস্ক। একইসঙ্গে এ ঘটনায় স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও গ্রিসসহ বহু দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে ঢাকাতেও। ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা এ ত্রাণবহরের ৪০টি নৌকা আটকে দিয়েছে ইসরাইলী নৌবাহিনী। গত বৃহস্পতিবার এ নৌবহরের আয়োজকরা জানিয়েছেন, বহরের বেশিরভাগ নৌকা আটকে দেওয়া হলেও অন্তত একটি নৌকা গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। পরে সেটাকেও আটকে দেয়া হয়।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এ নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষের মধ্যে রয়েছেন পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক। বহর গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে গাজায় পৌঁছানোর কথা ছিল।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে রওয়ানা দেওয়া নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে ইসরাইলী বাধার মুখে পড়ে। বহরের বেশ কয়েকটি জাহাজ থামিয়ে তাতে উঠে পড়ে ইসরাইলি নৌ সেনারা। বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌযান থেকে চলা সরাসরি সম্প্রচার। পরে নৌযানে থাকা মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে সেখানেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ইসরাইলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোতে থাকা দু’শতাধিক স্বেচ্ছাসেবককে আটক করে ইসরাইলের একটি বন্দরে নেওয়া হয়েছে। গাজামুখী নৌযানে ইসরাইলী হস্তক্ষেপের কথা ফেসবুক লাইভে জানান ঐতিহাসিক মিশনটিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অংশ নেওয়া আলোকচিত্রী, শিল্পী ও সমাজকর্মী শহিদুল আলম।
তুরস্ক বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেসামরিক জাহাজের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। সহিংসতার আশ্রয় না নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এই হামলা প্রমাণ করে যে, গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর সরকার বাস্তবায়িত ফ্যাসিবাদী ও সামরিক নীতি, যারা গাজাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা কেবল ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিম তার দেশের নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইলকে জবাবদিহি করার জন্য সব বৈধ ও আইনগত ভিত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইসরাইল কেবল ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক অধিকারকে উপেক্ষা করছে না বরং বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিবেককেও পদদলিত করছে।
আমরা মনে করি, বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে শুধুমাত্র নিন্দা না জানিয়ে গাজাবাসীর প্রাণ রক্ষার জন্য কিছু করা উচিত। একটি যুদ্ধবিরতি যাতে স্বাক্ষরিত হতে পারে সে প্রচেষ্টা চালানোও উচিত।