দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। জ্বলছে না চুলা। কোথাও কোথাও টিম টিম করে জ্বললেও তাতে রান্না হয় না। এমন চিত্র নিত্যদিনের। শীত মওসুম শেষে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসার কথা। কিন্তু তা হয়নি। বৃহস্পতিবার সংকটটি আরো তীব্র আকার নিয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা যায়। বিশেষ করে দিনভর বাসাবাড়ি ও শিল্পে ভোগান্তি চরম আকার নেয়। বলা হয়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সাগরে অবস্থিত টার্মিনাল থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। গত মঙ্গলবার থেকে এ সমস্যা শুরু হয়।

গতকাল দৈনিক সংগ্রামে ‘বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকট বেড়েছে জনদুর্ভোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে বলা হয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। বুধবার থেকেই গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করে। এতে রান্নাসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। গত বৃহস্পতিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।

এতে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দু এলএনজি টার্মিনাল থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। গত সোমবার দেয়া হয় প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট। সাগর উত্তাল থাকায় মঙ্গলবার থেকে টার্মিনালগুলোতে এলএনজি আমদানি করা কার্গো যুক্ত হতে পারছে না। ফলে টার্মিনালে মজুত এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন করে লাইনে গ্যাস দেয়া হচ্ছে। এতে মঙ্গলবার রাত থেকেই সরবরাহ কমতে শুরু করে। বুধবার সন্ধ্যায় সরবরাহ কমে ২০ কোটি ঘনফুটে নেমে আসে। বৃহস্পতিবারও দিনভর ২০-২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে এলএনজি টার্মিনালগুলো।

পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) গত দুদিন ধরে এলএনজি কার্গো জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হয়নি। এর ফলে জাতীয় গ্রিডে আরএলএনজি (রি-গ্যাসিফাইড লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। রাজধানীসহ নগর ও শহরগুলোতে রান্নার জন্য গ্যাস ছাড়া কোন ভাল বিকল্প না থাকায় লাখ লাখ নগরবাসী এ সংকটের শিকারে পরিণত হয়েছে। ফলে তিন বেলা আহার যোগাতে পরিবারগুলোকে সীমাহীন কষ্টে নিপতিত হতে হয়েছে। আমরা মনে করি সরকারের উচিত হবে বিষয়টির উপর নিবিষ্ট মনোযোগ দেয়া। ঝড় বৃষ্টি বাংলাদেশের নিত্যসঙ্গী। একে ঘিরে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক ত্রুটি থাকলে তা নিরসনে দ্রুতই নজর দেয়া দরকার।

জানা যায়, দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক অন্তত ৪২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে এলএনজিসহ বর্তমানে দিনে গড় সরবরাহ ২৮১ কোটি ঘনফুট। এলএনজির সরবরাহ কমায় মোট গ্যাস সরবরাহ কমে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ঘনফুট। ফলে দেশজুড়ে সংকট বিরাট আকার ধারণ করে। এর আগে, বুধবার পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, বৈরী পরিস্থিতিতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে আবারও এলএনজি কার্গো জাহাজ এফএসআরইউ ভেড়ানো সম্ভব হবে। পেট্রোবাংলা জানায়, মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত এফএসআরইউতে (ভাসমান স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) দুদিন এলএনজি কার্গো বার্থিং (জাহাজ ভেড়ানো) করতে না পারায় জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সেন্ড আউট (গ্যাস সরবরাহ) ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা তাদের কথায় আশ্বস্ত হতে চাই। আমরা মনে করি অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে গ্যাস সংকটের আশু সুরাহায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।