১৬ বছরের স্বৈরশাসন থেকে দেশ মুক্তি পেয়েছে ১৪ মাস আগে। এখন দেশ নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের আগে জাতীয় দাবি ছিল রাষ্ট্র সংস্কার ও মানবতাবিরোধী অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের বিচার। সে প্রক্রিয়া চলমান। জুলাই সনদ গৃহীত হওয়ার পর যথাক্রমে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী নির্বাচনে যেন নতুন ফ্যাসিবাদের আগমন না ঘটে এবং দুর্নীতিবাজরা মনোনয়ন না পায় সে চাওয়া জনগণের।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে নির্বাচন দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তার সরকার বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে একটি ভাল ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো সে মতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিগত তিনটি নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়েছে, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে, দেখা গেছে দুর্নীতিবাজদের প্রাধান্য। আসন্ন নির্বাচনে জাতি তা আর দেখতে চায় না। এদিকে শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি রেখে সামগ্রীকভাবে দেশকে ভালো করা সম্ভব নয় বলে দুদক চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি খবর মঙ্গলবার দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রতিটি অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র থাকে। শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি রেখে সামগ্রীকভাবে দেশকে ভালো করা সম্ভব নয়। গত মঙ্গলবার দুদকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স এগেইনস্ট করাপশনের সাংবাদিকদের এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আশার কথা দুর্নীতিবাজদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখার কথা তার বক্তব্যে উঠে এসছে। আমরা এ বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে চাই।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, রাজনীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে প্রতিষ্ঠানে। রাজনীতিবিদরা স্বচ্ছ না হলে দুর্নীতি মুক্ত হওয়া সম্ভব না। তাই আপনারা সাংবাদিকরা এখন থেকেই আওয়াজ তুলতে পারেন যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো দুর্নীতিবাজকে মনোনয়ন না দেওয়া হয়। নির্বাচনে যাতে নমিনেশন বেচাকেনা না হয়। আবদুল মোমেন বলেন, আমরা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সৎ লোককে চাই। তাই এলাকার সৎ লোকটিকে যেন মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদেরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

গণমাধ্যমকে প্রধান হুইসেল ব্লোয়ার আখ্যা দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের কাজের ৭০ ভাগ আসে গণমাধ্যম থেকে। হয়তো আমরা সরাসরি নেই না। তবে গণমাধ্যম থেকেই আমরা ইঙ্গিত পাই। তারপর সেটি নিয়ে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করে। আমাদের কাজে সাংবাদিকদের সহায়তা লাগবে। আপনারা সাংবাদিকরা যদি আজকে বলেন, আপনারা আর আমাদের সঙ্গে নেই তাহলে দুদক কলাপস করবে। দুদক চেয়ারম্যানবলেন, জাতীয় নির্বাচনে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীদের তথ্য পেলে দুদক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ পলাতক দুর্নীতিবাজদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশসহ বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো কঠিন হলেও দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আমরা মনে করি দুদক চেয়ারম্যান যে কথা বলেছেন তা সময়োপযোগী ও প্রণিধান যোগ্য। এ বক্তব্য প্রদান করায় তাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। আমরা আরো মনে করি বাংলাদেশে স্বৈরাচারী আমল বা তার কোন ছায়া যদি আমরা দেখতে না চাই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোতে বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দেয়া দরকার। আমরা চাই দুর্নীতিবাজদের নির্বাচন থেকে বিরত রেখে রাজনৈতিক দলগুলো জনআকাক্সক্ষা পূরণ করুক। কোনভাবেই দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে মনোনয়ন কাম্য নয়।