জলবায়ু সম্মেলনের চাকা যেন ঘুরতেই চায় না। দীর্ঘ ১২ দিনের এ সম্মেলন শুরু হয়েছে গত সোমবার। সম্মেলনের ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো চূড়ান্ত চুক্তির বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এমন কি কোন কোন বিষয়ে একমত হওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। সম্মেলনে সবাই একমত হয়ে আদৌ কোনো ধরনের চুক্তিতে পৌঁছতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এদিকে সম্মেলনের বাইরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিক্ষোভ। বন উজাড় করে জলবায়ুকে হুমকির মুখে ফেলা শিল্প ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বিরুদ্ধে ব্রাজিলের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। গত শুক্রবার সম্মেলনের প্রধান প্রবেশ পথে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা কপ-৩০ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে কোরেয়া দোলাগোর সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানায়। তাদের দাবি মেনে নিয়েছে কপ-৩০ আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, উত্তর ব্রাজিলের প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার (৯ হাজার বর্গমাই) এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মুন্দুরুকু আদিবাসীগোষ্ঠীর লোকজন। ওই এলাকাটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের সমান প্রায়। মুন্দুরুকু আদিবাসী গোষ্ঠীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরাই জলবায়ুর রক্ষক। আমাজন বনকে বড় বড় কোম্পানির মুনাফার জন্য আর ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।’ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলু দা সিলভা এ বছরের কপ-৩০ আলোচনায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তবে আদিবাসী প্রতিনিধিরা কোরেয়া দোলাগোর সঙ্গে বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন-আলোচনার অংশ না করেই কেন তাদের স্বাগতিক শহর বেলেমে আনা হলো? ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী মারিনা সিলভা বলেন, তাদের যেসব দাবি রয়েছে, তা মূলত ব্রাজিল সরকারের উদ্দেশে এবং সেখানেই সেগুলোর সমাধান হওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, জলবায়ু সংকটকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হলেও সংকট সমাধানে তেমন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় না। এবার জলবায়ু সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে ব্রাজিল। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চেয়ে অতীতে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নই এবার সম্মেলনের মূল বিষয়। এমন বক্তব্য থেকে উপলব্ধি করা যায়, জলবায়ু সম্মেলনে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে নতুন প্রতিশ্রুতির বদলে আমাদের তাকাতে হচ্ছে পেছনের দিকে। অর্থাৎ জলবায়ু সম্মেলনের চাকা ঘুরছে পিছনের দিকে। সম্মেলনের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, তীব্র জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া খুবই দুর্বল হতে পারে। আলোচনা ভেঙেও পড়তে পারে। আর স্বাগতিক ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশ চাইছে, কপ-২৮ এর প্রতিশ্রুতি বহাল রেখে জীবাশ্ম জ¦ালানি থেকে ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার আহ্বানকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে। উপলব্ধি করা যায়, জলবায়ু সম্মেলনের চাকা পেছনের দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। হয়তো শক্তিমানদেরই জয় হলো। তবে জলবায়ু সংকটের মধ্যে তারা কি ভালো থাকতে পারবেন?