ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এবার শুধু দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি, আন্তর্জাতিক দিগন্তও স্পর্শ করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বহু প্রতিক্ষিত ডাকসু নির্বাচনের প্রতি দৃষ্টি ছিল সবার। এবারের নির্বাচনে মারামারি হয়নি, ব্যালটবাক্স লুণ্ঠন হয়নি, বরং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে নির্বাচন। নির্বাচনের পরেও বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীরা প্রদর্শন করেছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সৌজন্যতা। কিন্তু নির্বাচনের দু’সপ্তাহের পর এখন দৃশ্যপটে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ভিন্ন কিছু। পরাজিত কিছু প্রার্থী এখন তুলে ধরছেন অভিযোগের ফিরিস্তি, তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন দলভক্ত কতিপয় শিক্ষকও। সুষ্ঠু ও আনন্দময় ডাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার এমন অপপ্রয়াসকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নাগরিকরা ভালো চোখে দেখছেন না। ডাকসু নির্বাচনের পরে তো রাজনীতিবিদরা এবং সরকারের মন্ত্রীরা বলেছিলেন, এ নির্বাচন আমাদের জাতীয় নির্বাচনকে পথ দেখাবে। ফলে এখন প্রশ্ন জেগেছে, ডাকসু নির্বাচনকে বিতর্কিত করার এ হীন প্রয়াস কেন? শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফূর্ত রায়কে অসম্মান করার চেতনা আসে কেমন করে?
বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের (ইউটিএল)ও। গত শনিবার ডাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউটিএল নেতৃবৃন্দ বলেন, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার দু সপ্তাহ পর কিছু ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠন এ নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের তৎপরতা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাধীন রায়কে অসম্মানের শামিল বলে মন্তব্য করে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউটিএলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান বলেন, শিক্ষকদের সংগঠন হিসেবে ইউটিএল মনে করে, ডাকসু শুধু ছাত্র নেতৃত্বের মঞ্চ নয়, বরং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সামগ্রিক একাডেমিক পরিবেশ, নিরাপত্তা, নীতি ও গণতান্ত্রিক চর্চার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে যুক্ত। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার দু সপ্তাহ পর কিছু ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষকদের ফোরাম/সংগঠন নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা শুরু করেছে। এটি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাধীন রায়কে অসম্মান এবং গণতান্ত্রিক অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস ব্যতীত আর কিছুই নয়’। এ সময় ইউটিএলের কিছু পর্যবেক্ষণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়। তাঁরা বলেন, নির্বাচনের দিনটি ছিল উৎসবমুখর, আনন্দময় এবং শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার সজিব উদাহরণ। কেন্দ্রে উপস্থিতি, ব্যালট গ্রহণ ও ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ প্রমাণ করেছে যে, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দায়িত্বশীল, সচেতন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণরূপে বিশ^াসী।
ইউটিএলের সংবাদ সম্মেলনে তিনটি দাবি উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন যেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উত্থাপিত অযৌক্তিক প্রশ্নের সুরাহা করেন সাদা দলের শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে পরিচালিত নির্বাচনের বিরুদ্ধে সাদা দলের প্যাডে দেয়া বিবৃতি প্রত্যাহার এবং ডাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যেসব তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ইউটিএল যে তিনটি দাবি উত্থাপন করেছেন, আমরা আশা করছি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনা করে দেখবেন। ইতিমধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত জবাব পেশ করেন বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি। তাঁর বক্তব্যে বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়েছে এবং উপলব্ধি করা গেছে যে, ডাকসু নিবাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং সেখানে কারচুপির কোন সুযোগ ছিল না। ভিসি মহোদয় একথাও বলেছেন, কেউ চাইলে নির্বাচন সম্পৃক্ত ফুটেজ ও স্বাক্ষরযুক্ত ব্যালট দেখতে পারবেন বিধিসম্মতভাবে। পরিশেষে তিনি বলেছেন, ডাকসু শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি এবং তাদের অধিকার। বিজয়ী ও বিজিতদের ইতিবাচক উদ্যোগে ডাকসু এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে ভিসি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। আমরা মনে করি, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ডাকসুকে অযথা প্রশ্নবিদ্ধ করার তৎপরতায় কোনো কল্যাণ নেই। বরং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে ডাকসুর সাফল্য কামনাই গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক হবে।