ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাবনার জগতটা খুব একটা স্পষ্ট নয়। তবে এটা বোঝা যায়, তিনি একরোখা এবং কিছুটা এলোমেলো। এমন বৈশিষ্ট্য দিয়ে কি ভালো কিছু, বড় কিছু করা যায়? ইতিমধ্যে তাকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পিছু হটতে হয়েছে, সমঝোতাও করতে হয়েছে। এতো মানুষের পৃথিবীতে একরোখা ভাব নিয়ে বেশিদূর চলা যায় কী? অনেক কিছুই চলচ্চিত্রে দেখানো গেলেও, বাস্তবে তা অচল। অবশ্য হলিউডের একটা প্রভাব তো মার্কিন সমাজে আছেই। পৃথিবীতে এখন ট্রাম্পের শুল্ক ঘোড়ার চর্চা হচ্ছে। বিশ্বের মানুষ বিষয়টিকে পছন্দ করছেন না। মার্কিন জনগণ কি পছন্দ করছে? পছন্দ করছে না বলেই ট্রাম্পের শুল্কারোপ ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার কথা হচ্ছে। আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা ঐক্যবদ্ধভাবে শুল্কারোপে কংগ্রেসের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে একটি বিল উত্থাপন করেছেন। বৃহস্পতিবার সিনেটে ‘দ্য ট্রেড রিভিউ অ্যাক্ট-২০২৫’ নামে বিলটি উত্থাপন করা হয়।
এ বিল অনুযায়ী কোনো দেশের ওপর শুল্কারোপের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সংকুচিত হবে। বিল অনুযায়ী কোনো নতুন শুল্ক ধার্য করতে হলে প্রেসিডেন্টকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তা কংগ্রেসকে জানাতে হবে এবং এ কাজের বিষয়ে যুক্তি উত্থাপন করতে হবে। শুল্কের বিষয়ে জানানোর পর ৬০ দিনের মধ্যে কংগ্রেসকে ওই শুল্কের অনুমোদন দিতে হবে। কংগ্রেস যদি ৬০ দিনের মধ্যে অনুমোদন দিতে ব্যর্থ হয়, তবে ওই শুল্কের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া এ বিলের মাধ্যমে যে কোনো সময় অসম্মতি জানানোর জন্য, যে কেনো শুল্ক সমাপ্তির জন্য কংগ্রেসকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের ১৮৪টি দেশের পণ্যের ওপর শুল্কারোপের ঘোষণা দেন। এর পরপরই মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষের সদস্যরা বিলটি আনলেন। আমেরিকার আইওয়া রাজ্য থেকে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর চাক গ্রাসলি এবং ওয়াশিংটন থেকে নির্বাচিত বিরোধী ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর মারিয়া ক্যান্টওয়েল এ বিল উত্থাপন করেন। গ্রাসলি এক বিবৃতিতে বলেন, বহুদিন থেকেই কংগ্রেস নির্বাহী বিভাগকে বৈদেশিক বাণিজ্যের বিষয়ে সার্বিক ক্ষমতা দিয়ে রেখেছিল। নতুন এ বিল বাণিজ্যের বিষয়ে কংগ্রেসের সাংবিধানিক দায়িত্বের নতুন সূচনা করবে এবং বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে কংগ্রেসের বক্তব্যকে নিশ্চিত করবে। অপরদিকে ক্যান্টওয়েল তার বিবৃতিতে বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধ বিপর্যয়কর, যে কারণে আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতারা যুদ্ধ ও বাণিজ্যের বিষয়ে কংগ্রেসকে সুস্পষ্ট সাংবিধানিক ক্ষমতা দিয়ে গেছেন। তিনি আরও বলেন, নির্বিচারে শুল্কারোপ বিশেষ করে মিত্রদের ওপর শুল্কারোপের মাধ্যমে আমেরিকার রফতানির সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং মার্কিন ভোক্তা ও ব্যবসার জন্য খরচ বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, মার্কিন জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে কংগ্রেসের দায়িত্ব এমন পদক্ষেপ বন্ধ করা, যা তাদের ক্ষতি করবে।
এদিকে বুধবার ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর তার হাতের তালিকা ও হোয়াইট হাউসের সরবরাহ করা তালিকার মধ্যে ১৪টি দেশের শুল্কে গড়মিল লক্ষ্য করা যায়। পরে অবশ্য তা সংশোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে নতুন তালিকা সরবরাহ করা হয়। ট্রাম্পের শুল্কারোপের জেরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে মার্কিন শেয়ারবাজারে। বিভিন্ন সূচক অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত থেকে শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটেছে। ডো জনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের সূচকে শেয়ারবাজারের দরপতন হয়েছে চার শতাংশ। এস অ্যান্ড পি ফাইভ হানড্রেডের সূচকে দরপতন হয়েছে চার দশকি আট শতাংশ। এছাড়া নাসডাক কম্পোজিট সূচকে দরপতন হয়েছে ছয় শতাংশ। একই সঙ্গে ট্রাম্পের শুল্কারোপের ধাক্কা লেগেছে বিশ্ব শেয়ারবাজারেও। এ প্রসঙ্গে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এদিকে বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, শুল্কের বিষয়ে আলোচনার জন্য তার দরজা খোলা রয়েছে। ট্রাম্পের আহ্বানে কে কিভাবে সাড়া দেবেন জানি না। তবে ট্রাম্পের গুল্কারোপ ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার একটা আয়োজন তো যুক্তরাষ্ট্রে চলছে। মার্কিন কংগ্রেসে সেই বিলের পরিণতি দেখার অপেক্ষায় আমরা আছি। আমরা বিশ্বাস করি বাণিজ্যযুদ্ধ কখনো মানবজাতির জন্য কল্যাণকর বলে বিবেচিত হতে পারে না। আর নেতৃত্বে যদি থাকে ট্রাম্পের মত একরোখা মানুষ, তাহলে তো দুশ্চিন্তার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।