দেশে সারের ঘাটতি, মৃল্য বৃদ্ধি ও ডিলারদের কারসাজি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। এ খবরের মধ্যে গতকাল দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি খবর প্রণিধানযোগ্য। এতে বলা হয়েছে, দেশে সারের কোনো ঘাটতি হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কোনো অবস্থাতেই সারের দাম বাড়বে না বলেও উপদেষ্টা জানান। গত বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এসব কথা জানান। সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অন্যদিকে পত্রিকান্তরে গত কয়েক দিনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কারসাজিতে অস্থির সারের বাজার। কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা আমন চাষ করছেন শত শত বিঘা জমিতে। বীজতলা ও রোপণের জন্য টিএসপি সার কিনতে কৃষকদেরকে সরকার নির্ধারিত দর কেজিপ্রতি ২৭ টাকার বদলে স্থানীয় বাজার থেকে ৩৮ টাকায় কিনতে হয়েছে। প্রতি কেজিতে বেশি গুনেছেন তারা ১১ টাকা। তাদের অভিযোগ, ডিলার চক্রের কারসাজি থেকে মুক্ত হয়নি সারের বাজার। সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও মাঠ পর্যায়ের এ বাস্তবতার প্রতিফলন রয়েছে। সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবহন ঠিকাদার ও ডিলাররা সার মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।

আমরা মনে করি এসব অভিযোগ গুরুতর। এগুলোর সুরাহা হওয়া দরকার। সারের মূল্য নিয়ে কারসাজি বন্ধে সরকারের করণীয় রয়েছে। আর তা দ্রুতই করতে হবে। আমরা কৃষি উপদেষ্টার কথাতে আশ্বস্ত হতে চাই। সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন জরুরী। কৃষি উপদেষ্টা বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় রেখে যাওয়া সারের বকেয়া পরিশোধ করে চাহিদামতো সার আমদানি করে সরবরাহ করা হয়েছে। দেশে সারের কোনো ঘাটতি হয়নি, আগামী মৌসুমেও যাতে ঘাটতি না হয় সে লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সার আমদানিতে সব সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হয়েছে। বৈশ্বিক মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখন থেকে সার আমদানি হবে। বলা হয় সারের মূল্যবৃদ্ধি হয়নি, সারের কোনো ধরনের দাম বাড়ানো হয়নি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া আছে, কোনো অবস্থাতেই যেন সার পাচার না হয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, পেট্রোবাংলা যদি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে, তারপর যে সার উৎপাদন হবে, তবুও কোনো অবস্থায় সারের দাম বৃদ্ধি পাবে না। আমি অন্তত যতদিন আছি, সারের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন এবং কৃষিকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও লাভজনক খাতে রূপান্তর করা ছিল সরকারের অগ্রাধিকার। গত এক বছরে কৃষি মন্ত্রণালয় এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে এবং তার ধারাবাহিকতা চলমান রয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে আমরা ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করেছি। ধান, গম, ভুট্টা, ডাল, তেলবীজ ও শাকসবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলমূল উৎপাদনেও আমরা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।

কৃষি উপদেষ্টা যেসব কথা বলেছেন তাতে আশ্বস্ত হওয়ার মতো উপাদান আছে। তবে বাস্তবতাকে অস্বীকারও করা যাবে না। গণঅভ্যুত্থানের পর সরকার বদলের এক বছরের বেশি হতে চললেও সারের বাজারের নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া ডিলারদের হাতেই রয়ে গেছে বলে অভিযোগ। এসব ডিলারের অনেকে পালিয়ে থাকায় তাদের নামে সার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। আবার অনেকে সার বরাদ্দ পেলেও কারসাজি করছেন।

আমরা মনে করি কৃষকের জন্য নির্ধারিত দামে সার পৌঁছে দেয়ার কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে আগামী মৌসুমেও (নভেম্বর-মার্চ) সরবরাহ ঘাটতি ও দাম বাড়ার ঝুঁকি থেকে যাবে। আর সারের পুরনো সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে বলে উপদেষ্টা যে কথা বলেছেন সেটা বাস্তবে কতখানি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কোন ব্যত্যয় থেকে থাকলে তা দূর করে কৃষকবান্ধব নীতি গ্রহণ করা জরুরী।