বর্ষার এ সময়টাতে দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ও রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ বছরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও সে কথাই বলা হয়েছে। সহযোগী একটি দৈনিক এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে, এ পানি জমা হচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট বা পাত্রে। এসব জমানো পানি অপসারণ করা হচ্ছে না। ফলে সেখানে মশার প্রজনন হবে; পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি রয়েই গেছে এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর প্রভাবে এডিস মশা বাড়ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রাজধানীতে যদিও মশা নিধনের কিছু কার্যক্রম চোখে পড়ে। কিন্তু ঢাকার বাইরে সে ধরনের কোনো কার্যক্রম নেই। ফলে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার অনেক বেশি। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তা না হলে সব রোগী রাজধানীতে এসে ভিড় করবে, তাতে জটিলতা বাড়বে। সারাদেশে তরুণদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পরিচালনা করতে পারলে ভালো হবে। জানা গেছে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং মে মাসে করা এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছে, ঢাকার বাইরেও এডিস মশার বিস্তার বাড়ছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বরিশাল সিটি করপোরেশন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং কুষ্টিয়া, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ এবং মাগুরা পৌরসভা এলাকায় এই জরিপ করা হয়।

আমরা মনে করি পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে ওঠার আগেই বিষয়টির উপর নজর দেয়া উচিত। পাশাপাশি মশক নিয়ন্ত্রণে কোথাও কোন ঘাটতি থেকে থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিগত ১৬ বছরে জনবান্ধব সরকার না থাকায় এ ব্যাপারে কাজের কাজ তেমন হয়নি সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৯২ জন। ২৩ জুন সোমবার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

চলতি বছরের ২২ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ ও ৪১ শতাংশ নারী। চলতি বছরে এ যাবত ডেঙ্গুতে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। এর আগের বছর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের, পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

আক্রান্ত ও মৃত্যুর এ হিসাব থেকে এটা স্পষ্ট যে অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছুঁয়েছে। তবে তা আরো খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই থামানো প্রয়োজন। বিগত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পরবর্তী সময়টাতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া উদ্যোগের ফলে আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে বলে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করি এ সাফল্য ধরে রাখতে হবে। আর সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেই তা সম্ভব। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ দেখতে চাই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে হলে চিকিৎসাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সেকেন্ডারি পর্যায়ের হাসপাতাল যেমন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বা জেলা হাসপাতালে ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাহলে রোগীর সংখ্যা কমে যাবে, মৃত্যুর সংখ্যা কমে যাবে। এসব পরামর্শ আমলে নিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানাই।