DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

রমযানে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে হবে

বাংলাদেশ গুটিকয়েক দেশের মধ্যে একটি যেখানে পবিত্র মাস রমযান আসামাত্রই দ্রব্যমূল্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

Printed Edition
Default Image - DS

বাংলাদেশ গুটিকয়েক দেশের মধ্যে একটি যেখানে পবিত্র মাস রমযান আসামাত্রই দ্রব্যমূল্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এবার রমযান মাস শুরুর আগ দিয়ে অন্তত পেঁয়াজ, আলু, রসুন ও সবজির দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। শুধুমাত্র লেবুর দামটাই মাসখানেক যাবত চড়া হয়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে এবং দেশে অরাজনৈতিক একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকায় ভোক্তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল যে, অন্তত এবার হয়তো দ্রব্যেরমূল্য রমযান মাসে সহনীয় অবস্থায় থাকবে।

কিন্তু রমযান মাস শুরু হওয়ামাত্রই সে আশা ভঙ্গুর হয়ে যায়। সরবরাহে ঘাটতি দেখা যায় সবজির বাজারেও। ফলে জিনিসপত্রের দাম মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। একটি যুক্তি সবজি বিক্রেতারা অবশ্য দিয়েছেন। তাদের দাবি যেহেতু এবারের রমযানটি শীতের শেষ এবং গরমের শুরুতে পড়েছে তা শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন-দু’ধরনের সবজির দামই চড়া। শীতের সবজি শেষ দিকে তাই শীতকালীন সবজির দাম বেশি আর গরমের সবজিও এখনও বাজারে খুব বেশি সহজলভ্য না হওয়ার কারণে গ্রীষ্মকালীন সবজির দামও বাড়তি।

সবজির বাজারের বাইরে মাছ, গোশতের দামও নাগালের বাইরে। কোনোভাবেই খাবারগুলোর দাম না কমায় ভোক্তাদের সংকট রয়েই গেছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর আমিষ চাহিদা বছরজুড়েই অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। বাজারে একইসাথে তৈরি করা হয়েছে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট। যদিও বাণিজ্য উপদেষ্টা দু’একদিনের মধ্যেই তেলের সংকট কাটিয়ে ওঠার আশ্বাস দিয়েছেন; কিন্তু রোজার মাসে ভোজ্য তেলের ব্যবহার আগের মাসের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় এ মাসে তেলের সংকট ভোক্তাসাধারণের জন্য অনেক বেশি দুর্ভোগের কারণ হয়। সরকার আগে থেকে বেশ কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে পারলে পরিস্থিতি হয়তো এতটা জটিল হতো না।

সাধারণ মানুষসহ সমাজের বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, অসাধু ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জন্যই দ্রব্যমূল্য রমযান মাসে বেড়ে যায়। বিশেষ করে পণ্য মজুদ করে রাখা এবং সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের একটি অসৎ প্রয়াস থাকার কারণে বাজার পরিস্থিতি সবসময়ই বিশেষ করে রোজার মাসে ক্রেতা সাধারণের জন্য বেশ প্রতিকূল হয়ে যায়। কিন্তু একাধিকবার বিষয়গুলো উচ্চারিত হলেও সিন্ডিকেট ভাঙার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আশানূরূপ কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।

দু’তিনটি কোম্পানির হাতে তেল ও চিনির মতো পণ্যগুলো জিম্মি হয়ে থাকার কথা বাজারে চালু থাকলেও তাদেরকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার মতো কোনো দৃষ্টান্ত চোখে পড়েনি। অধিকন্তু বেশকিছু ভোজ্য পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বিগত সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় এবং তাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণেও নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকেই এমনও ধারণা করেন যে, বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরির উদ্দেশ্যেও রমযান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হতে পারে।

কারণ বা প্রেক্ষাপট যাই হোক-দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে ক্রেতাসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার ভেতর রাখার দায় মূলত সরকারের। সরকার যদি এ কাজটি না করে তাহলে ক্রেতাসাধারণ নেপথ্য কারণ নিয়ে খুব বেশি কথা শুনতে চাইবে না। কারণ তাদেরকে প্রতিদিনের খাবার খরচ মেটানোর জন্যই প্রাণান্তকর পরিশ্রম করতে হয়।

তাই আমরা আশা করবো, শুধুমাত্র আশ্বাসের কথা না বলে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে হলেও অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তৎপর হবেন। একইসাথে পণ্য সরবরাহের চেইনে কোনো অসঙ্গতি থাকলে সেগুলো দূর করে বিশেষ করে মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনতে সক্ষম হবেন। রমযান মাসটি যেন ভোক্তা সাধারণ স্বস্তির সাথে অতিবাহিত করতে পারেন তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার বিশেষ করে রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করবেন তাদের দায় এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি।