গত সপ্তাহে রাজধানীসহ সারাদেশে হয়ে যাওয়া চার দফা ভূমিকম্পের আতংক এখনো জনমনে রয়ে গেছে। এনিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ঢাকার বাসিন্দারা। এ ধরনের যে কোন বড় দুর্যোগের বিষয়ে সাবধানতার কথা উচ্চারিত হচ্ছে। কারণ এতে ঢাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মৃত্যু ঝুঁকিও তাদের বেশি। এরই মাঝে দৈনিক সংগ্রামে বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে একটি ভয়াবহ চিত্র। এতে বলা হয়েছে রাজধানীর ৮০ ভাগ ভবনই অনুমোদনহীন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকায় ছোটবড় ভবনের সংখ্যা কতো, তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান আজও তৈরি করা হয়নি। বছরের পুরো সময়জুড়েই ভবন নির্মাণের কাজ চলে ঢাকার আনাচে কানাচে। ফলে সঠিক হিসাব নিকাশ অনুমোদনকারী সংস্থার কাছেও থাকে না। রাজধান উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক তার ১৫২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে থাকে। এছাড়া, রাজধানীর ভেতরে ক্যান্টমমেন্ট বোর্ড, বাইরে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাও ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে থাকে। রাজউকের ধারণা মতে, ঢাকায় ভবন রয়েছে ২১ লাখ ৪৬ হাজারের মতো। তার মধ্যে ৮০ ভাগ ভবনই অনুমোদনহীন বলছে সংস্থাটি।
এর আগে রাজউকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধুপুর ফল্টে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানীর সাড়ে ৮ লাখ ভবন ধসে পড়বে এবং প্রায় ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াবে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে সিলেট ফল্টের ভূমিকম্পে ক্ষতি কিছুটা কম হবে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর বসে থাকার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ভবনের ঝুঁকি নিরীক্ষার ক্ষমতা শুধু রাজউকের হাতে সীমাবদ্ধ না রেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা। আর ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় ট্রাস্ট গঠনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত উপদেষ্টা।
আমরা মনে করি দুটো খবরই খুব উদ্বেগজনক। জনমনে ভূমিকম্পের যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে তা এই খবরে আরো বৃদ্ধি পাবে। এদিকে আশার কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজউক তার আওতাধীন এলাকায় নির্মিত ভবনগুলো নিয়ে জরিপ শুরু করছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয় করে অনুমোদনহীন ভবনগুলো চিহ্নিত করা হবে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, কম ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও ঝুঁকিপূর্ণ নয়- এমন ভবনের তালিকা করা হবে। তালিকা ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারনের নির্দেশ দেয়া হবে। নির্দেশ মানা না হলে রাজউক অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে ফেলবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বড় কিছু যে হতে পারে, এটার একটা বার্তা এসেছে। আমরা যেন প্রস্তুত থাকতে পারি, সেটার জন্য প্রত্যেকেই আমরা রাজউক এবং অন্যান্য সংস্থাকে সহায়তা করি। আমি মনে করি, রাজউকের পাশাপাশি সার্ভিস প্রোভাইডার যারা আছে, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, ডেসা, গ্যাস, তাদেরকেও সচেতন করতে হবে। যদি এ রকম হয় তাহলে গ্যাসের লাইনটা কোথা থেকে বন্ধ করতে হবে, প্রত্যেক এলাকায় কিছু ভলেন্টিয়ার তৈরি করতে হবে।’
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করছে সরকার।তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রস্তুতির পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়, এটা নিয়েই আমরা কথা বলছি এবং এটিকে কার্যকর করার চেষ্টা করছি, যাতে দেশের মানুষ যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও, প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও, ঝুঁকি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও আমরা এটা পালন করতে পারব।’ আলোচনায় রাজউক চেয়ারম্যান জানান, নিরাপদ ভবন নির্মাণ নিশ্চিতে নতুন একটি কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হচ্ছে।
আমরা রাজউকের এ কথাতে এবং সরকারের দু’উপদেষ্টার বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই। আমরা মনে করি অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতরের উচিত হবে বিষয়টির ওপর দৃষ্টি রাখা। রাজউক জরিপ শুরু করার যে পরিকল্পনার কথা বলছে তা যেন বাস্তবায়িত হয় সে ব্যাপারেও সরকারের নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। ঢাকায় অনুমোদনহীন ভবনগুলোর কথা ভাবতে হবে। অননুমোদিত ভবনে দুর্যোগের ঝুকি বেশি থাকবে সেই বিবেচনায় বিষয়টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।