২০২৪ সালে জুলাই বিপ্লবের পর দেশ এখন গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে। গণতন্ত্রে উত্তরণের এ পথটি রচনার ক্ষেত্রে নানা বাধাবিঘ্ন সামনে আসছে, আসাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে সেসব বাধা অতিক্রম করে সকলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে উত্তরণ ঘটানোই এখন সময়ের দাবি। সে বিষয়টি সামনে এসেছে ইইউ রাষ্ট্রদূতের কথাতে। গত মঙ্গলবার দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডরস (এওএফএ) বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক নিয়ে ওই মতবিনিময়ের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এওএফএর সভাপতি আবদুল্লাহ আল হাসান।
এ সময় রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আগামী বছর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। আর নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছি। সেখানে তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা এবং আকাঙ্ক্ষা লক্ষ্য করেছি। বাংলাদেশের সামনে এখন তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের সময় এসেছে। তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, উন্নয়ন সহযোগীসহ সব পক্ষের এক সঙ্গে কাজ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন রাজনৈতিক উত্তরণের দিকে এগোচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রদূত বলেন, গণতন্ত্রে উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন হওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার।
আমরা মনে করি ইইউ রাষ্ট্রদূত যুক্তিপঝর্ণ কথাই বলেছেন। তার এ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংস্কারের উপর জোর দিয়েছে। সম্প্রতি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং এ সংক্রান্তে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিশন সদস্যরা জানান, খুব শিগগিরই কমিশন তাদের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জমা দিবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানতম তিনটি ম্যান্ডেটের অন্যতম হচ্ছে সংস্কার। তাই নির্বাচন ও বিচারের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে জুলাই সনদের বিষটিকে দেখতে হবে। তিনি বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন শুধুমাত্র একটি সাধারণ নির্বাচনই নয়, এটি হচ্ছে একটি ফাউন্ডেশনাল ইলেকশন যার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে আগামীর বাংলাদেশের পথরেখা। তিনি বলেন, “তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদেরকে অবশ্যই মৌলিক সংস্কারগুলো চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কোন বিকল্প আমাদের হাতে নেই।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংস্কার প্রক্রিয়ায় সাফল্যের ওপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। সংস্কার প্রক্রিয়া সফলভাবে বাস্তবায়নে সকলের সহায়তা প্রয়োজন। কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করছে কমিশন। সংস্কার প্রক্রিয়ায় ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্টসহ বেশির ভাগ আলোচনায় একমত রাজনৈতিক দলগুলো বলেও জানান তিনি। ড. আলী রীয়াজ আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কিংবা রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে কোনো কিছু কাউকে চাপিয়ে দিবে না আর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তি তো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার। এ প্রক্রিয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতও গ্রহণ করেছে ঐকমত্য কমিশন।
আমরা মনে করি, সংস্কারের বিষয়টি তাই অনেক গুরুত্ববহ। আর এ লক্ষ্যে সংস্কার সম্পন্ন হওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইইউ যে আহ্বান জানিয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার যে প্রতিশ্রতি ব্যক্ত করেছে তা পালিত হওয়া সময়ের দাবি। সে লক্ষ্যে জাতিকে পরিচালনা করাই এখন প্রধান কাজ। সরকার এবং সকল পক্ষ সেই কাজকে এগিয়ে নেবেন বলে আমরা আশাবাদী।