অনাহারে আছে গাজার শিশুরা। যারা পৃথিবীকে আলো দেখাবেন, যারা সভ্যতার শাসক, তাদের কেউ কি অনাহারে আছেন? বিপুল বপুর দাম্ভিক মানুষগুলো অনাহারে না থাকলে নিষ্পাপ ছোট্ট শিশুরা অনাহারে থাকবে কেন? এ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে সভ্যতার শাসকদের। এএফপি এবং আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা প্রায় দু’মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। এ কারণে উপত্যকাটিতে খাদ্য, ওষুধ, পানি ও প্রয়োজনীয় কোনো সরঞ্জাম ঢুকতে পারছে না। সেখানকার ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমও কার্যত বন্ধ। গাজার শিশুরা অনাহারে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘসহ কিছু দেশ সোচ্চার হলেও তাতে কর্ণপাত করছে না ইসরাইল। বরং গাজায় নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে দেশটি। বৃহস্পতিবারের আগের ২৪ ঘন্টায় ইসরাইলী হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৭ জন ফিলিস্তিনী। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনী শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) মুখপাত্র জুলিয়েট তমা বলেন, অবরুদ্ধ গাজা শিশু ও প্রবীণদের জন্য নীরব ঘাতক হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন স্থানে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম নিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি ট্রাক গাজায় ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু এসব ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছে না। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলা চালায় ইসরাইল। এ হামলার আগে প্রতিদিন ৫০০ ট্রাকে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও অন্যান্যা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হতো। অথচ গত ২ মার্চ থেকে গাজায় কোনো মানবিক ও বাণিজ্যিক ট্রাক ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরাইল। উল্লেখ্য, হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর এত দীর্ঘ সময় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ বন্ধ ছিল না।
ইসরাইলী অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী, আশ্রয়সামগ্রী ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে উত্থান ঘটেছে কালোবাজারিদের। এ কারণে ১০ থেকে ২০ গুণ, মাঝেমধ্যে ৪০ গুণ বেশি দামে এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে গাজাবাসীদের। জাতিসংঘের বিশ্বখাদ্য কর্মসূচীর (ডব্লিউএফপি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ গাজায় যুদ্ধবিরতির সময়ের চেয়ে এখন খাবারের দাম ১ হাজার ৪০০ শতাংশ বেড়েছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইলের হামলার কারণে গাজায় অসংখ্য মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তো যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র ইসরাইলের নিষ্ঠুর ও নৃশংস নানা অপকর্মের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, কিন্তু তাতে তো পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আসলে পৃথিবী নামক এ গ্রহটিতে এখন আর মানুষরা তেমন বসবাস করে না। যারা এখন পৃথিবী শাসন করছে তারা আসলে মানবের মুখোশধারী কতিপয় মহাদানব। মহাদানব ও ক্ষুদ্র দানবে এখন পৃথিবী ভরে গেছে। ফলে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আহ্বান জানালেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে প্রশ্ন জাগে, দানবশাসিত এ পৃথিবী আর কতদিন টিকে থাকবে?