সাম্প্রতিক সময়ে দেশ থেকে অর্থ পাচার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা কৌশলে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই অর্থ পাচারের প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) কর্তৃক গত ২২জুলাই রাজধানীতে আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হচ্ছে। প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয় তার ৭৫ শতাংশই চলে যায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে পণ্য আমদানিকালে ওভার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানি কালে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার তুলনামূলকভাবে সহজ। তাই অর্থ পাচারকারিগণ এ পদ্ধতিই অনুসরণ করে থাকে। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমেও বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএম’র শিক্ষক ও গবেষক ড. আহসান হাবিব। তিনি তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য অর্থ পাচার করা হয়। আমদানি এবং রপ্তানিকালে মিথ্যে ঘোষণা দিয়ে এ অর্থ পাচার করা হয়। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে যে অর্থ পাচার হয় তা দেশের মোট জিডিপি’র প্রায় ২ শতাংশ। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) কয়েক বছর আগে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। অর্থ পাচার একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যে অর্থ দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারতো তা অন্য কোনো দেশে চলে যাচ্ছে এবং তাদের উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে যারা অন্য দেশের নাগরিকদের অর্থ পাচার করে আনার জন্য প্রলুব্ধ করে। যেমন- মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম নামে একটি বিশেষ প্রকল্প আছে। বাইরের যে কোনো দেশের নাগরিকরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। এজন্য তাদের বিনিয়োজিত অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হয় না। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। কানাডার বেগমপাড়ায় প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশীর আবাসন ভবন এবং ফ্লাট রয়েছে। এগুলো মূলত পাচারকৃত অর্থ দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে। অর্থ পাচার কোনো একক দেশের পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি দেশকে নৈতিকতা চর্চা করতে হবে। কোনো বিদেশী নাগরিক যদি স্থানীয় কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ ছাড়াই বাড়ি বা অন্য কোনো ধরনের সম্পদ ক্রয় করে তাহলে সেই সম্পদ জব্দ করা যেতে পারে। এটা করা হলে অর্থ পাচার অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে।