এখন বোধ হয় নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত মানুষের। এর আগে অন্য কিছুকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন মানুষের। প্রশ্নটা এভাবে করা যেতে পারে, আমি কতটা মানুষ? প্রশ্নটা নিজ থেকে শুরু হলে, সমাজে-রাষ্ট্রে-বিশ্বে প্রশ্নের সংখ্যা কমে আসবে। কারণ, তখন মানুষ আত্মসংশোধনে মগ্ন হবে। এমনটা হলে সমাজ-রাষ্ট্র-বিশ্বের মঙ্গল হবে। কিন্তু সে মঙ্গলের পথে আমরা হাঁটছি না তো। তবে নিউইয়র্ক টাইমসে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। ঘটনাটি আমাদের কিছুটা হলেও আশাবাদী করে তুলেছে।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ সংবাদ করার প্রতিবাদে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ‘মতামত’ বিভাগকে বয়কট করেছেন পত্রিকার ১৫০ কন্ট্রিউবিটর বা প্রদায়ক। এ নিয়ে তারা একটি অঙ্গীকারনামায় সই করেছেন। স্বাক্ষরকারীরা অঙ্গীকারনামায় লিখেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না নিউইয়র্ক টাইমস তার পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশনের জন্য জবাবদিহি না করবে এবং গাজা যুদ্ধ নিয়ে সততা ও নৈতিকতার সঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিশ্রুতি না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিউজরুম বা সম্পাদকীয় বোর্ডের কাছে কোনো লেখা তারা জমা দেবেন না। প্রদায়করা আরো লিখেছেন, এ চিঠির মাধ্যমে ফিলিস্তিনের সাংবাদিক ও লেখাকদের কাছে প্রচার করা যে, তারা আর টাইমসের সঙ্গে জড়িত নন, সেখানে লেখাও দিচ্ছেন না। তাদের এ বয়কট অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না পত্রিকাটি তাদের সংবাদের মাধ্যমে ইসরাইলকে সমর্থন করা বন্ধ করে। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন রিমা হাসান, চেলসি ম্যানিং, রাশিদা তালিব, স্যালি রুনি এলিয়া সুলেইমান, গ্রেটা থুন বার্গ, ভিয়েতথান নগুয়েন, ডেভ জিরিন প্রমুখ। এদের কেউ অ্যাক্টিভিস্ট, কেউ আর্টিস্ট, কেউবা মার্কিন রাজনীতিবিদ।

নিউইয়র্ক টাইমসকে ১৫০ জন প্রদায়ক বা লেখকের বয়কটের ঘটনা কোনো ছোট ঘটনা নয়, বরং প্রতিবাদের জগতে এক বড় ঘটনা। নিউইয়র্ক টাইমসের মত বিশ্বখ্যাত পত্রিকাকে যারা বয়কট করেন, তারা অবশ্যই বড় মাপের মানুষ। তাদের বয়কটের মাধ্যমে একটি বিষয় প্রমাণিত হলো যে, বর্তমান সভ্যতায় এমন অনেক কিছুই বড় বা বিখ্যাত বলে প্রচারিত হচ্ছে, যা আসলে বড় বা বিখ্যাত নয়, প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে ওরা বিখ্যাত ও বড় হয়ে উঠেছে। ওদের ভিত নড়বড়ে করে দিয়েছেন নিউইয়র্ক টাইমসের ১৫০ প্রদায়ক। আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। পত্রিকাটির বিরুদ্ধে তারা পক্ষপাত, সততা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রশ্নের আলোকে পত্রিকাটি যদি নিজেকে সংশোধন না করে, তাহলে আরো বৃহত্তর বয়কটের মুখে পড়তে পারে। বর্তমান সভ্যতাও একই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে আছে। সভ্যতার শাসকরা সংশোধনের পথে হাঁটবেন কি?