এবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কেননা এ দু’টি অঞ্চল এখন মারাত্মক সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।’ আনাদোলু এজেন্সি ও ডেইলি সাবাহ জানায়, গত শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবাগ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের (এসপিআইইএফ) মূল অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে পুতিন এ হুঁশিয়ারি দেন। রুশ প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বজুড়ে সংঘর্ষের বিপুল আশঙ্কা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা বৈশ্বিক যুদ্ধের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। সব সঙ্কটেরই শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত।’ তিনি ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের সমালোচনা করে বলেন, ‘এ জোট বারবার রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করছে। এটি পশ্চিমাদের উপনিবেশবাদী নীতির আরেকটি রূপমাত্র।’

এসপিআইইএফ-এর মূল অধিবেশনে বক্তব্য প্রধানকালে পুতিন দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, ইরানের বুশেহর পারমাণবিক স্থাপনায় রুশ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করবে। মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘ইসরাইল সত্যি যদি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার কথা বিবেচনা করে থাকে, তবে আমি আশা করি এটি কেবল কথার কথা হিসেবেই থাকবে।’ এর আগে রুশ প্রেস সচিব দিমিত্রি পেসকভ সেন্ট পিটার্সবার্গের কনস্টান্টিন প্রাসাদে স্কাই নিউজকে বলেন, ‘ইরানে সরকার পরিবর্তনের কথা যারা বলছে, তারা যেন মনে রাখে এটা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এতে দেশটিতে চরম পন্থার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।’ তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘যারা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যার কথা বলছে, তারা যেন মনে রাখে তাতে তারা এক ভয়ঙ্কর প্যাণ্ডোরার বাক্স খুলে দেবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং রুশ প্রেস সচিব দিমিত্রি পেসকভ যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন, তাতে কি নতুন কিছু আছে? এমন হুঁশিয়ারি তো মার্কিন বলয় থেকেও আমরা শুনেছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিশ্বের সাধারণ মানুষকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি কেন শোনানো হচ্ছে? তারা তো বিশ্বযুদ্ধের আয়োজন করে না। বিশ্বযুদ্ধ প্রতিরোধের ক্ষমতাও সাধারণ মানুষ রাখে না। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারিগর ছিলেন সভ্যতার শাসকরা। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও কারিগর হবেন সভ্যতার শাসকরাই। তবে এর পরিণাম ভোগ করবে বিশ্বের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। ভূ-রাজনীতির রেষারেষিতেই তো বিশ্বযুদ্ধ। ভূ-রাজনীতির যারা নেতা তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন না কেন? তারা তো সাধারণ মানুষকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ সম্পর্কে হুঁশিয়ার করছেন, তারা কি নিজেদের একটু হুঁশিয়ার করতে পারেন না? তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তো পরাশক্তি তথা বিশ্বনেতাদের ভ্রষ্ট রাজনীতির জন্যই হবে। তারা কি নিজেদের মধ্যে আলোচনার কোনো তাৎপর্য খুঁজে পান না? তাদের আলোচনা কি শুধ্ইু কাগুজে আলোচনা, কিংবা চাতুর্যমণ্ডিত বাকবিনিময়? তাদের আলোচনায় কি কোনো সমাধান আসে না? বিশ্বনেতারা কি পারস্পরিক আস্থার সংকটে ভুগছেন? আমরা জানি, এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তাদের কাছে নেই। অতএব কূটনীতির আড়ালেই তারা আশ্রয় নেবেন। কিন্তু এতে তো বিশ্ববাসীর সঙ্কটের সমাধান হবে না। শোষণ-বঞ্চনা, বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও যুদ্ধ-বিগ্রহের পরিবেশে তো মানবিক জীবনযাপন সম্ভব নয়। অথচ এমন পরিবেশ আরো ঘনীভূত হয়ে আসছে।

অনাকাক্সিক্ষত এমন পরিবেশ থেকে মানুষ বাঁচতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন হবে সঠিক জীবনদর্শন। ইহলৌকিকবাদী তথা সেক্যুলার নেতারা তো নিজেদেরকে প্রভুর আসনে অধিষ্ঠিত করে রেখেছেন। তারা যে মহাপ্রভুর সৃষ্টি তথা বান্দা, সেই সত্য ভুলে গেছেন। পরম সত্য ভুলে গেলে নেতারা অহংকারী ও দাম্ভিক হয়ে ওঠেন। অহংকার যে পতনের মূল, সে সত্য বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এ যুগে তথা মারণাস্ত্র প্রতিযোগিতার এ সভ্যতায় আবার প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। মানুষকে আবার প্রকৃত মানুষ হতে হবে। তাকে উপলব্ধি করতে হবে, সেক্যুলার সভ্যতায় সে দানব হয়ে উঠেছে। আসলে সে মরণশীল ক্ষুদ্র মানুষ। আপন কর্মের ফল তাদের ভোগ করতে হবে ইহকালে এবং পরকালে। নবি হযরত মূসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.) এবং হযরত মোহাম্মদ (স.) এমন কথাই বলে গেছেন। তাহলে সভ্যতার শাসকদের এই পথে চলতে বাধা কোথায়?