আজ ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস। ২০২৪ সালের এ দিনে পতন হয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের। বাংলাদেশের ইতিহাসে দিনটি উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। দীর্ঘ ১৫ বছরের দুঃশাসনে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশটিকে নাগরিকদের বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছিল। দুর্নীতি ও লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল। আর এ কাজটি করা হয়েছে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে। মানুষের কথা বলার অধিকার ছিল না। গুম ও খুনের মাধ্যমে রাষ্ট্রে সৃষ্টি করা হয়েছিল ভয়ের সংস্কৃতি। যার বড় উদাহরণ ‘আয়না ঘর’। আর বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ওপর যে জুলুম-নির্যাতন ও অপমানজনক আচরণ করা হয়েছে, ইতিহাসের পাতায় তা লিপিবদ্ধ থাকবে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের যে নিকৃষ্ট প্রক্রিয়ায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের এক নিকৃষ্ট উদাহরণ। আইন-আদালত, প্রমাণসহ সব ক্ষেত্রেই চলেছে সরকারদলীয় লোকদের মাস্তানি। এভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের অপশাসনে প্রিয় স্বদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছেছিল। আর কত। দেশের ছাত্র-জনতা জীবনবাজি রেখে রুখে দাঁড়ায় ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে। বিপরীতে গণশত্রু ও দেশবিরোধী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। এ যজ্ঞে বিপথগামী আইন-শৃংখলা বাহিনীর কিছু সদস্যসহ যোগ দেয় ভ্রষ্ট মিডিয়া এবং কিছু গণমাধ্যম পণ্ডিতও। এরা গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, দুর্নামের মাত্রা বাড়িয়েছে। ধিক তাদের। ওদের জায়গা হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। অবশেষে জয় হয়েছে জীবনবাজি রাখা লড়াকু দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার। আবারও প্রমাণিত হলো, ফ্যাসিবাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মত পালিত হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এখানেই বিকেল ৫টায় পাঠ করা হবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এসব তথ্য জানানো হয়। পোস্টে বলা হয়, ছত্রিশ জুলাই-গত বছরের এ দিনে পৃথিবী দেখেছিল এক অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান, যার ফলে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ফ্যাসিস্ট। বহু শহীদের রক্ত ও যোদ্ধাদের ত্যাগের পথ ধরে পুরো বাংলাদেশ এক হয়েছিল। পথে পথে ছিল উল্লাসমুখর জনতার জোয়ার। বাংলাদেশের বহু রাস্তায় আবেগাপ্লুত মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। এক বছর পর আবার ফিরে এসেছে ছত্রিশ জুলাই। এই দিনে ঘোষিত হতে যাচ্ছে জাতির কাক্সিক্ষত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজন থাকছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ অবশ্যই জাতির আকাক্সক্ষার বিষয়। এটি নাগরিকদের একটি বড় অর্জনও বটে। তবে এখানে এ বিষয়টিও বলে রাখা প্রয়োজন যে, ঘোষণাপত্রই সবকিছু নয়। ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের মত নৈতিকতা ও সাহস থাকা প্রয়োজন। যারা গণঅভুত্থানের সাথে জড়িত ছিলেন, তাদের অনেকের মধ্যেই নৈতিক পদস্খলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে আবার এমন পলিটিক্স শুরু করেছেন, যেখানে ফ্যাসিবাদের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রতিরোধের এখনই সময়। আশা করি দেশের দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সময়ের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবেন। তারা প্রমাণ করবেন, ক্ষমতার চাইতে দেশ ও জনগণ বড়। আমরা আশা করবো, জুলাই ঘোষণাপত্র সামনে রেখে দেশ এগিয়ে যাবে বিচার, সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের রোডম্যাপে।