সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর এলাকার বিশেষ আকর্ষণ সাদা পাথর লুটপাটের দুঃখজনক খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ধলাই নদের উৎসমুখে ভেসে আসা পাথরের বিশাল স্তূপের কারণে প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে তৈরি এ স্থানটি পর্যটন স্পট হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ সাড়া ফেলেছিল। জানা যাচ্ছে নয়নাভিরাম এ এলাকাটি এখন পাথরবিহীন বিরান এলাকায় পরিণত হয়েছে। আমরা বিস্মিত এটা ভেবে যে একটি পর্যটন কেন্দ্রের এসব পাথর কিভাবে লুট হয়ে গেল প্রশাসনের চোখের সামনে।
আশার কথা অবশেষে টনক নড়েছে প্রশাসনের। আর এ পাথর পুনস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে পাথর লুট ও পাচারের বিরুদ্ধে বুধবার রাত থেকে অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি ট্রাকে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে নদীতে পুনরায় ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত পাথরের বড় অংশ ধলাই নদীতে ফেরত দেয়ার কাজ চলছে, যাতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়। একই সঙ্গে রাতের মধ্যেই পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন রাঘব বোয়ালকে গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে রয়েছে।
খবরে বলা হয়, স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সাদাপাথর এলাকায় প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার করে আসছে। সম্প্রতি এ লুটপাটের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে ধলাই নদীর তীরবর্তী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবৈধভাবে উত্তোলিত সব পাথর উদ্ধার ও জড়িতদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত অভিযান চলবে। এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও পরিবেশ বাঁচাতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, মজুত বা পাচারে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। চেকপোস্টে বুধবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এ সময় প্রায় ৭০টি গাড়িতে সাদাপাথর এলাকার পাথর শনাক্ত হলে সেগুলো পুনরায় প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অপর খবরে বলা হয়, রাজধানীর ডেমরা থেকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকা থেকে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ সাদা খনিজ পাথর উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করেছে সারুলিয়ায় র্যাব-১১, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ভোলাগঞ্জ এলাকা থেকে প্রায় দু লাখ ঘনফুট সাদা পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা। একই সময় প্রায় ছয় লাখ ঘনফুট বালুও লুট হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২৪০ কোটি টাকা। স্থানীয় দয়ার বাজার, কলাবাড়ি ও ভোলাগঞ্জের ১০ নম্বর ঘাট থেকে এসব সাদা পাথর সংগ্রহ করে বিভিন্ন ক্রাশার মেশিনে পাঠানো হতো বলে জানা গেছে। এসব খবরে দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
আমরা মনে করি, যে কোন মূল্যে সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা, এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য এলাকাটিতে পাথর পুনস্থাপনের কোন বিকল্প নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে খুবই আন্তরিকভাবে এই কাজটি করার জন্য আমার অনুরোধ জানাই। আর এ পাথর লুটের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারেরও আহ্বান জানাই।