ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন পর আয়োজিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক আগে হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিতাদেশ এবং পরে চেম্বার জজ আদালতের মাধ্যমে সে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারÑসব মিলিয়ে নির্বাচনকে ঘিরে নানা নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
একটি বিশেষ রিট আবেদনের মাধ্যমে ঢাবি শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ দেওয়া হলেও চেম্বার আদালতের হস্তক্ষেপে নির্বাচনের বাধা কেটে গেছে। তবে এ ঘটনাই প্রমাণ করে, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে বিভিন্ন পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে আদালতে মামলা, ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা, কিংবা শিক্ষার্থীদের আবেগকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টাÑএসবই নির্বাচনের স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করার কৌশল মাত্র।
আশ্চর্যের বিষয়, যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উত্তরাধিকার দাবি করেন, তারাই আবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে প্রক্রিয়া জটিল করার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচার এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ ছড়িয়ে নির্বাচনী পরিবেশকে কলুষিত করা হচ্ছে। নির্বাচনী ব্যানার ভাঙচুর ও নারী প্রার্থীদের ছবির অবমাননা করাও এক ধরনের ন্যক্কারজনক অপতৎপরতা, যা গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে মিছিল করে যে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং পরে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের খবর পেয়ে উল্লাস করেছে, সেটিই প্রমাণ করে ছাত্রসমাজ প্রকৃত অর্থে নির্বাচন চায়। শিক্ষার্থীরা চায় ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে। এ সময়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র বা অপপ্রচার গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা। নির্বাচন কমিশন তিন স্তরের নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এরই মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে না বলে জানিয়েছেন। আইএসপিআর ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছে, সেনাবাহিনীকে ডাকসু নির্বাচনে সম্পৃক্ত করার কোনো পরিকল্পনা নেই। অথচ এর আগে নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনিক বৈঠকে নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে সেনা মোতায়েনের একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে দীর্ঘদিন পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত রাখার স্বার্থেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা দরকার ছিল বলে অনেকেই মতামত ব্যক্ত করেছেন।
এখন সময় এসেছে, সবাইকে রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও ব্যক্তিগত আক্রোশ পরিহার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ডাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, রাজনৈতিক সংগঠন, এমনকি আদালতÑসব পক্ষের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অক্ষুণ্ন রাখা। নির্বাচনের পথে যে কোনো ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার কিংবা সহিংসতাকে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে। ডাকসু নির্বাচন শুধুমাত্র একটি ছাত্র সংসদের নির্বাচন নয়; এটি ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। এ নির্বাচন যদি বাধাহীন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে সম্পন্ন হয়, তবে তা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে নতুন প্রাণ দেবে। তাই আমাদের চাওয়া হলো ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার নয়, বরং প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চার অধিকারই এখন সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে।