বিগত সরকার আমলে সরকার সমর্থক উদ্যোক্তা গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নামে বেনামে যে ঋণ গ্রহণ করেছেন তা এখন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। গত জুন মাসে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা ছাড়কৃত মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এক বছর আগেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল গত বছর জুন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সরকার সমর্থক দেশের শীর্ষ স্থানীয় ১১টি উদ্যোক্তা গোষ্ঠীর নিকট পাওনা রয়েছে খেলাপি ঋণের সিংহভাগ। এরা নানাভাবে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছেন। অনেকেই ঋণকৃত অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রভাবিত করে ব্যাংকিং সেক্টরে প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানের আইনগুলোকে পরিবর্তন করে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেই খেলাপি ঋণ আড়াল করে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টগণ মনে করেন, ব্যাংকিং আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে যে খেলাপি ঋণ আড়াল করে রাখা হয়েছে তা প্রকাশ্যে এলে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ ৭ থেকে ৮ লাখ কোটি টাকা হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণকে সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা যাবে না। কারণ ঋণ খেলাপিরা খুবই ক্ষমতাবান এবং তারা যে কোনো অসাধ্য সাধন করতে পারেন। এক শ্রেণির মানুষ আছেন যাদের মাঝে পরকালীন চিন্তা তেমন একটা নেই। এরা মনে করেন, অর্থই হচ্ছে সকল জাগতিক ক্ষমতার উৎস। তাই তাদের মাঝে কখনো অনুশোচনা জাগে না। এদের জেলে পুরো কোনো লাভ হবে না। একসময় তারা ঠিকই দায়মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসে আবারো অপরাধ কমতে থাকবেন। ঋণ খেলাপি এবং অবৈধভাবে বিত্ত অর্জনকারিদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত শাস্তি হতে পারে তাদের সমুদয় সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে জব্দ করে তাদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা। উপযুক্ত আদালতের মাধ্যমে তারা দায় মুক্ত হয়ে আসতে পারলে তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া হবে। আর দোষি প্রমাণিত হলে তাদের জব্দকৃত সম্পদ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করে লব্ধ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে। সম্পদহারা মানুষের কোনো শক্তি থাকে না। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের এখনই সময়। কারণ রাজনৈতিক সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন না।