এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ১০ এপ্রিল। ছাত্রছাত্রীদের জীবনের প্রথম বড় ধরনের বোর্ড পরীক্ষা বা পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি। এ কারণে এর যেমন গুরুত্ব রয়েছে, এ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও একটি টেনশন বা আবেগময়তা কাজ করে। ছাত্রছাত্রীদের স্কুল জীবনের সমাপ্তি ঘটে এ পরীক্ষার মাধ্যমে। সকল পরীক্ষার্থীকে শুভেচ্ছা অভিনন্দন। আশা করি ভালয় ভালয় এ পরীক্ষা পর্ব শেষ হবে। তবে একটি খবর ভাবনার বটে। তা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী উপস্থিত না হওয়া।

খবরে প্রকাশ, এ বছর প্রথম দিনের পরীক্ষায় সারা দেশে ২৬ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। অনুপস্থিতির হার ১.৫৬ শতাংশ। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ২২ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোলরুম থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে আরো বলা হয়, শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে এই নিয়মে ছেদ পড়ে। আগের তিন-চার বছরের মতো চলতি বছরও এপ্রিলে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। কন্ট্রোলরুমের তথ্য অনুযায়ী, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল প্রায় ১৪ হাজার ৭৩৮ জন পরীক্ষার্থী। এসব বোর্ডে বহিষ্কৃত হয়েছে ১০ জন পরীক্ষার্থী। সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৪৯৬ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল ঢাকা বোর্ডে। এ ছাড়া রাজশাহীতে এক হাজার ৬২২, কুমিল্লায় দুই হাজার ৫৫৩, যশোরে এক হাজার ৮০০, চট্টগ্রামে এক হাজার ১৭৩, সিলেটে এক হাজার ১৭৩, বরিশালে এক হাজার ৩৩, দিনাজপুরে এক হাজার ৩৪১, ময়মনসিংহে ৮৪২ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ৯ হাজার ৬২৩ জন। এ বোর্ডের আওতায় ১০ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

কারিগরি বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ২ হাজার ৫৬৭ জন। এ বোর্ডে দুজনকে বহিষ্কার করা হয়। গত বছর যেখানে ১৯ হাজার ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত ছিল, সেখানে ৮ হাজার সংখ্যা বৃদ্ধির খবরটি গুরুত্ব বহন করে। আমরা বলতে চাই, এ ৮ হাজার বৃদ্ধি কেন হলো? আগের বছরের তুলনায় তা কমিয়ে আনা গেল না কেন সে বিষয়টির উপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড গুলোর খতিয়ে দেখা উচিৎ। রেজিস্ট্রেশন, টেস্ট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ, টেস্ট বা নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফরম ফিলাপ করে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। অযোগ্য ছাত্রছাত্রীরা সে পরীক্ষায় বাদ পড়ে যায়। যোগ্যরাই থাকে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য। কিন্তু সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন ২৭ হাজার ছাত্রছাত্রী এই শেষ ধাপে এসে অংশ নিল না সেটা খুঁজে দেখা দরকার। আগে দেখা যেত পরীক্ষায় কড়াকড়ি আরোপের কারণে কিছু ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। যথেচ্ছ নকলের সে যুগ আর নেই। বর্তমানে পরীক্ষা ব্যবস্থায় শৃঙক্ষলা ফিরে এসেছে। নকলের প্রবণতা নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় অনুপস্থিতির এই উচ্চ হার সকলকেই ভাবনায় ফেলেছে।

পরীক্ষায় এবার মোট পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ২০২৪ সালের তুলনায় এবার প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কম। গতবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। গতবারও তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪৮ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছিল। দেখা যাচ্ছে পরীক্ষার্থী কম হওয়ার পরও বাড়ছে অনুপস্থিতির হার। আমরা মনে করি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিৎ এবং এ ব্যবধান কমিয়ে আনার লক্ষ্যে করণীয় নির্ধাারণ করে সে মতে অগ্রসর হওয়া উচিৎ।