৩৬ জুলাই পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে সৃজনশীল অনেক কর্মকাণ্ড যেমন বেড়েছে, মানুষ যেমন আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে; তেমনি কিছু অপশক্তিও এ স্বাধীনতার সুযোগ নিতে ভুল করছে না। এর মধ্যে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বেশ কিছু অপতৎপরতাও চোখে পড়ছে। বিপ্লব পরবর্তী সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে পাহাড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অপতথ্য ও মিথ্যাচার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে যার সাথে বাস্তবতার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।
পাহাড়ে আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর কার্যকলাপ বেড়েছে বলেও জানা গেছে। এরকম বেশ কিছু সশস্ত্র সংগঠনের ক্রমবর্ধমান চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা, গুম ও সন্ত্রাসের ফাঁদেও নিয়মিত রক্ত ঝড়ছে দেশের স্পর্শকাতর এ অঞ্চলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বেশকিছু যোগাযোগ ও প্রচার মাধ্যমে নিয়মিত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকা- সংক্রান্ত নেতিবাচক প্রচারণা চলছে। বিশ্লেষকরা এ বিষয়টিকে উদ্বেগজনক এবং এর অন্তরালে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন। এর পেছনে স্বার্থান্বেষী কিছু মহলের গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
আতংকিত হওয়ার মতো আরো একটি খবরও সম্প্রতি সামনে এসেছে। জানা গেছে, গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল ইউনিফর্ম ও অস্ত্রধারী আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সার্বভৌম সীমা লঙ্ঘন করে বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের রেমাক্রি মুখ এলাকায় বাংলাদেশের ১০ কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করে স্থানীয় উপজাতিদের নিয়ে জলকেলি উৎসব পালন করেছে। আরাকান আর্মির সদস্যরা শুধু জলকেলি উৎসবই পালন করেই ক্ষান্ত হয়নি; ঐ উৎসবের সচিত্র ভিডিও তারা সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ‘ইউএলএ’ এবং স্থানীয় জনগণ ঘটা করে ঐ উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের সীমানার ১০ কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করে উৎসব করার মাধ্যমে তারা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে।
এরই মধ্যে আরেকটি ঘটনাও সামনে এসেছে। দৈনিক সংগ্রামসহ বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত খবরসূত্রে জানা যায়, গত ২১ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সদর দফতরে আদিবাসী ইস্যু-বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের একটি সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনটি আগামী ২ মে পর্যন্ত চলবে। এ সম্মেলনে আদিবাসী কোটায় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রতিনিধি ও সন্তু লারমার নাতনি অগাস্টিনা চাকমা। উনি ছাড়াও এই ফোরামের আরো দুজন প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অগাস্টিন চাকমা বেশ কিছু দাবি তুলেছেন। যেগুলোর প্রতিটিই বাংলাদেশের নিরাপত্তা স্বার্থের বিচারে উদ্বেগজনক। এই দাবির মধ্যে কয়েকটি হলো
১. পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করতে হবে।
২. এ এলাকায় থাকা বাঙ্গালীদের অন্যত্র সরিয়ে দিতে হবে।
৩. ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে।
৪. ভারত থেকে জুম্মু শরনার্থীদের পুনর্বাসন করতে হবে।
৫. আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
যতটুকু জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলও এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা আশা করবো, সম্মেলনের অবশিষ্ট দিনগুলোতে সরকারের প্রতিনিধিরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সত্যিকারের চিত্র আন্তর্জাতিক পরিম-লে তুলে ধরবেন। এ কথা মোটামুটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের এ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য প্রচার ও উপস্থাপন করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলকে প্রভাবিত করার একটি অপপ্রয়াস চলমান রয়েছে। যারাই এগুলো করছে, তারা কেউ দেশের কল্যাণ চায় বলে মনে হয় না। বরং তারা ক্ষুদ্্র গোষ্ঠীভিত্তিক স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য দেশের নিরাপত্তাকেই ঝুঁকিতে ফেলছেন। আমরা আশা করবো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।