DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

ছন্দে ফিরছে জাতীয় অর্থনীতি

আগস্ট বিপ্লবের পর জাতীয় অর্থনীতিতে ছন্দ ফিরতে শুরু করেছে। কারণ, আওয়ামী শাসনামলে দেশের অর্থনীতি একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছিলো। প্রবৃদ্ধি তলানীতে এসে ঠেকলেও জনতুষ্টির জন্য ভৌতিক প্রবৃদ্ধির গালগল্প শোনানো হতো দেশের মানুষকে।

Printed Edition

আগস্ট বিপ্লবের পর জাতীয় অর্থনীতিতে ছন্দ ফিরতে শুরু করেছে। কারণ, আওয়ামী শাসনামলে দেশের অর্থনীতি একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছিলো। প্রবৃদ্ধি তলানীতে এসে ঠেকলেও জনতুষ্টির জন্য ভৌতিক প্রবৃদ্ধির গালগল্প শোনানো হতো দেশের মানুষকে। অথচ বাস্তবতা ছিলো একেবারে অন্তঃসারশূন্য। মূলত, প্রায় ১৬ বছরের অপশাসন-দুঃশাসন, লুটপাট-দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে রীতিমত নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো। শেয়ারবাজার থেকে লক্ষকোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছিলো। সরকারকে ব্যাংক থেকে ধার-দেনা করে চলতে হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে দেখা দিয়েছিলো রীতিমত তারল্য সঙ্কট। কিন্তু তারপর পতিত সরকারের উচ্চাভিলাষী কথার কোন অন্ত ছিলো না। জাতীয় উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ছিল পতিত সরকারের কথামালার ফুলঝুরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

গত আগস্ট বিপ্লবের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন হওয়ার পর ধীরে ধীরে জাতীয় অর্থনীতিতে ছন্দ ফিরতে শুরু করেছে। কারণ, রাষ্ট্রের এ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর অশুভ শক্তির অপতৎপরতা কমে এসেছে। ফলে গতি ফিরেছে জাতীয় অর্থনীতিতে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, গত ছয় মাসে যেভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি কামব্যাক করেছে সেটা মিরাকল বললে অত্ত্যুক্তি হওয়ার কথা নয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে দেশের অর্থনীতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, সেটা যেকোনো সময় ফল করত বলেও মনে করা হতো। কিন্তু অতিঅল্প সময়ের মধ্যেই সে অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। জাতীয় অর্থনীতি দিনের পর দিন ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত ‘ডিজেএফবি টক’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ ধরনের সুখবর শুনিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। যা জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন করে আশাবাদের সৃষ্টি করেছে।

অর্থনৈতিক সেক্টরের অতীতের নৈরাজ্যের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আপনার টাকা নেই কিন্তু আপনি মসজিদ করবেন। সরকার কেন মসজিদ করবে? গণমাধ্যমে দেখলাম একটি মসজিদ করতে ১৫-১৬ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু এ মসজিদ পাড়ার কমিটিগুলো ৩ কোটি টাকায় করতে পারত। চুরির একটা উৎসব চলেছে। তিনি বলেন, ‘এনার্জি খাতে ডিসিপ্লিন ফিরিয়ে আনা দরকার। স্টেট স্পন্সরশিপ করে ডাকাতি হয়েছে এ খাতে। বিদ্যুৎ খাতে স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করছি। বড় বড় পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমরা গ্যাসের জন্য প্রচুর পরিমাণে কূপ খনন করতে চাই’। বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো হবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো হবে। এ পোর্টের দক্ষতা না বাড়লে ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে না। রি-এক্সপোর্ট করতে গেলে চট্টগ্রামের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। এজন্য বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমরা চাই চট্টগ্রামের প্রতিটি পোর্ট উন্নয়ন করতে, তাহলে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে’। প্রস্তাবগুলো খুবই সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি অধিকতর সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে।

তার ভাষায়, ‘আওয়ামী অপশাসন-দুঃশাসনের সময়ে ব্যাংকের টাকা চুরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের নিজের জন্য টানেল হয়েছে। দেশের অর্থনীতি কলাপস হওয়ার মতো অবস্থায় ছিল, ছয় মাসে ইকোনমি যে অবস্থায় কামব্যাক করেছে তা মিরাকল। আমরা এমন এক ইকোনমিক ব্যবস্থা পেয়েছিলাম যেখানে জমিদারের মতো হাতে কিছু টাকা পেয়েছি তা বাজে কাজে ব্যবহার হয়েছে। অপচয়কে ট্যাকেল দিতে ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। বাজেটের বড় অংশ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে যাচ্ছে’। তার এসব কথাকে বাস্তবসম্মতই মনে করছে অভিজ্ঞমহল। তিনি মনে করেন, ‘এনার্জি সিস্টেমে দক্ষ না হলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। পাওয়ার সিস্টেমে ডাকাতির বন্দোবস্ত করা হয়েছে। দেশে বিনিয়োগ দরকার, সেটা করা হয়নি। রেভিনিউ সিস্টেম করছেন তা ভালো ছিল না। হাতে টাকা নেই, যা তা খরচ করেছে বিগত সরকার। ৫৬০টা মডেল মসজিদে বেশি ব্যয়ে করা হয়েছে, যা আরও কম টাকায় করা যেত। এমনভাবে রেললাইন টানা হয়েছে সারা দিনে রেল চলে না। এটা জনগণের টাকার অপচয় করা ছাড়া কিছু নয়’। তার কথায় বিগত সরকারের অর্থনৈতিক সেক্টর লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈরাজ্যের প্রমাণ মিলে।

যাহোক, মাত্র ৭ মাসের মধ্যেই পতিত সরকারের সকল নৈরাজ্যের ধকল কাটিয়ে উঠে জাতীয় অর্থনীতি নতুন করে মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মূলত, অর্থনৈতিক সেক্টরে লাগামহীন নৈরাজ্য বন্ধ হওয়ায় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। যা সত্যিই ইতিবাচক। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রই যাতে আমাদের অর্থনীতিকে বিপথগামী করতে না পারে সেদিকে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন করে স্থবিরতা কোনভাবেই কাম্য নয়!