হঠাৎ, চূড়ান্ত, উগ্র, স্বৈর, একক, প্রান্তিক-এমন শব্দগুলো অনেক সময় স্বস্তিকর মনে হয় না। কখনো কখনো তো ‘ভয়’ যুক্ত হয়ে যায়। ভাবছিলাম ট্রাম্পের নব্য শুল্কনীতির সাথে কোন শব্দ যুক্ত করা যায়। লক্ষ্য করলাম, এ শিল্পনীতিকে মন্দ বলার লোকের অভাব নেই, তবে মাত্রায় তারতম্য আছে। ফলে একক শব্দ ব্যবহারে ঝুঁকি আছে। কিন্তু ট্রাম্প তো নব্য শুল্কনীতি প্রণয়নের বেলায় সে ঝুঁকির কথা ভাবেননি। এ কারণেই কি ট্রাম্পের নব্য শুল্কনীতি বাতিল চেয়ে মার্কিন নাগরিকরা আদালতে যাচ্ছেন? উল্লেখ্য, নব্য শুল্কনীতি বাতিল চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অরাজনৈতিক আইনি সংস্থা ‘লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার’। গত সোমবার এ মামলা দায়ের করা হয়। পাঁচটি মার্কিন আমদানিকারক সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে মামলার বাদী হয়েছে লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার। গত ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় সবদেশের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে বিশ্বপরিস্থিতি লক্ষ্য করে গত ১০ এপ্রিল চীন ব্যতীত অন্যসব দেশের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প।
বিষয়টিকে ট্রাম্প ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা’ বলে প্রচারণা চালালেও, অনেকেই বলছেন এটা আসলে স্বেচ্ছাচারিতা। লিবার্টি জাস্টিস সেন্টারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও আইনজীবী জেফ্রি শোয়াব এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিরই শুল্ক বা কর আরোপের এমন ক্ষমতা থাকা উচিত নয়, যা বিশাল বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী যাবতীয় কর বা শুল্ক আরোপের এখতিয়ার মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়।’ তবে নব্য শুল্কনীতির কারণে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। রয়টার্স জানায় বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দামে হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে পুঁজিবাজার থেকে ‘গায়েব’ হয়ে গেছে শতশত কোটি ডলার।
মামলার ঘটনায় ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া জানতে হোয়াইট হাউসে যোগাযোগ করেছিল বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেখানে প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র ট্রাম্পের নব্য শুল্কনীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের বিরোধীরা সবসময়ই তার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে বলবে। কিন্তু সত্য হলো, বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে চীন তার নিজের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার শোষণ করছিল। আমাদের প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখতে চেয়েছেন, এর বেশি কিছু নয়।’ বাস্তবতা হলো, ট্রাম্পের নব্য শুল্কনীতি ঘোষণায় টালমাটাল হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এ শুল্কনীতি বিশ্বকে মন্দার দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদি এ পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামলানো না যায় তবে মন্দার চেয়েও খারাপ কিছু হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। গত রোববার এক ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমদানি করা সেমিকণ্ডাক্টরের ওপর শুল্ক হার ঘোষণা করবেন। এর অর্থ হচ্ছে, চীন থেকে আমদানি করা স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের ওপর দেওয়া শুল্কছাড় আর বেশি দিন থাকছে না। ট্রাম্প হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকণ্ডাক্টর খাতকে শক্তিশালী করতে চাচ্ছেন। গত সোমবার ফেডারেল রেজিস্টারের ফাইলিংয়ে দেখা গেছে, ওষুধ এবং চিপসের বিদেশী উৎপাদনের উপর ব্যাপক নির্ভরতা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিÑএমন যুক্তিতে ট্রাম্প প্রশাসন উভয় ক্ষেত্রেই শুল্ক আরোপের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ওষুধ ও সেমিকণ্ডাক্টর আমদানির বিষয়ে তদন্ত শুরু করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা চিপ, সেমিকণ্ডাক্টর ও অন্যান্য জিনিস আমাদের দেশেই তৈরি করতে চাই।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনতে চাইছেন। কখনো বলছেন, আমার এ দ্বীপ চাই, কখনোবা ওই খালটা চাই। তবে বাণিজ্যযুদ্ধের মহড়াটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বেশি। আমরা যতই জাতীয় স্বার্থের কথা বলি না কেন, জাতির প্রয়োজন কিন্তু ছড়িয়ে আছে বিশ্বের মাঝে। একা আমরা কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। এই যে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’, মিক্সড ইকোনমি’-এসবই বিশ্ববাস্তবতা থেকে সৃষ্ট। তাই বলতে হয়, ট্রাম্পের যে নব্য শুল্কনীতি তা শুধু বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিষয়টি বুঝতে পেরেই হয়তো ট্রাম্পের শুল্কনীতি বাতিল চেয়ে মার্কিন আদালতে মামলা হয়েছে। আসলে সবাইকে নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে। তবে ইনসাফের দৃষ্টিভঙ্গিটা এখানে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।