DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

জাতির ক্রান্তিকালে করণীয়

বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এমন একটা সময়ে দেশের সব মানুষ সঙ্গত আচরণ করলে নানা সংকটের সমাধান সহজ হয়ে উঠতে পারে।

Printed Edition

বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এমন একটা সময়ে দেশের সব মানুষ সঙ্গত আচরণ করলে নানা সংকটের সমাধান সহজ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সঙ্গত আচরণ তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সাধারণ-অসাধারণ সব মানুষের ক্ষেত্রেই বিষয়টা সত্য। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে আমরা সব ভুলে গেলাম! দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী আমলে আমরা কেমন ছিলাম? আমরা কি নিজেদের নাগরিক ভাবতে পারতাম? অধিকারের কথা কি আমরা উচ্চারণ করতাম? রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা তো মার খেতে খেতে একেবারে নিরীহ হয়ে গিয়েছিলেন। কোনোমতে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করতেন, কিছু কর্মসূচি দিতেন। ফ্যাসিস্ট সরকার কাউকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেয়নি। ভারতের সমর্থনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এতটাই দাম্ভিক ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, মন্দ কাজের পরিণতি সম্পর্কে ভাবার কান্ডজ্ঞানও তারা হারিয়ে ফেলেছিলেন। ফলে দেশে চলেছে গুম, খুন, লুন্ঠন। পুলিশ-প্রশাসনসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। এমন অসহনীয় একটি পরিস্থিতিতে জীবনবাজি রেখে রাজপথে নেমে এসেছে দেশের ছাত্র-জনতা। রাজনৈতিক দলগুলোও নানা কৌশলে সাহায্য করে গেছে। তবে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। কিন্তু ইতিহাসের এই সত্য মেনে নিতে আজ অনেকেই কুন্ঠা প্রকাশ করছেন। এমন বাতাবরণে জুলাই আন্দোলনের তপ্ত রাজপথ, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তাক্ত ক্যাম্পাসের চিত্র স্মরণে আনলে হয়তো আমরা সম্বিৎ ফিরে পাবো।

জুলাই আন্দোলনে অবদানের ফিরিস্তি দেওয়ার চিত্রও এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন কান্ডে লজ্জিত হতে হয়। সন্দেহ হয়, এই আমরাই কি জুলাই বিপ্লব সংঘটিত করেছিলাম? বিপ্লবের ফল লুন্ঠনের লালসা কি আমাদের পথভ্রষ্ট করছে। যদি প্রশ্ন করি, ফ্যাসিস্ট হাসিনা গংদের লুন্ঠন-লালসার সাথে বর্তমান লুন্ঠন-লালসার পার্থক্য কতটুকু? এমন মর্মবেদনার কারণটাও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। প্রিয় স্বদেশ এখন কোন পাটাতনে দাঁড়িয়ে আছে? প্রায় বিধ্বস্ত একটি দেশের অর্থনীতি একেবারেই ফোকলা হয়ে গেছে। দেশে-বিদেশে চলছে ফ্যাসিবাদের দোসরদের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড। সংখ্যালঘু কার্ডের পর এখন আবার শুরু হয়েছে হাইব্রিড যুদ্ধের কৌশল। আর দেশে এখন যেন চলছে দাবি-দাওয়ার ঝড়। ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ শাসনে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও বঞ্চনার কথা আমরা জানি। মানুষের দাবি-দাওয়া পূরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু সেই সময়টা কি এখনই? দীর্ঘ দেড় দশকের অভাব-অভিযোগ এই ছয় মাসেই কিভাবে পূরণ করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের দুর্বল অবস্থান আমরা লক্ষ্য করছি। পুলিশ, প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মহল থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি সঙ্গত সহযোগিতা পাচ্ছে? সরকারে যারা থাকেন তাদের বহন করতে হয় গুরুদায়িত্ব। তবে তারা কোনো গোছালো পরিবেশে দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি নানা বিতর্ক। সাংবিধানিক সরকার নাকি বিপ্লবী সরকারÑএই বিতর্কে অনেকটা সময় গেছে, বিতর্ক এখনো থামেনি। সংস্কার, নির্বাচন এবং ঐক্য সবার চাওয়ার বিষয় হলেও, দৃষ্টিভঙ্গি ও মাত্রার তারতম্য নিয়ে আমরা এক ধরনের চিরও লক্ষ্য করছি। এই চিরকে ফাটলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কুচক্রী মহল। ফ্যাসিবাদের দোসররা, এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছে। সেই সুযোগ আমাদের রাজনীতিবিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা এবং বুদ্ধিজীবীরা দেবেন কিনা, সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক আছেন বলেই মনে হয়। তারা তো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও উগ্রতার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। ব্লেমগেমের পরিবর্তে ঐক্য ও ধৈর্যের পথে চলার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু অনুসারীরা সেসব কথা কতটা মানছেন? অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন আরো নিপুণভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনোভাবেই ভুলের মাত্রা বাড়ানো যাবে না। কারণ, আমরা যে এখন ক্রান্তিকালে আছি।