ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান বার্ষিকীতে ৫ আগস্ট জাতির দীর্ঘ দিনের কাক্সিক্ষত জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছে। এ ঘোষণাপত্রের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আজ ৮ আগস্ট এ সরকারের বর্ষপূর্তির দিনটিতে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার হয়ে আসা বর্তমান সরকারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

গত ডিসেম্বরে জুলাই বিপ্লবের ছাত্র নেতৃবৃন্দ জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঘোষণাপত্র জারি করার কথা ব্যক্ত করে। অবশেষে ৫ আগস্ট সে ঘোষণাপত্র জারি হয়েছে। এতে অনেকগুলো বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে হঠানোর আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা দলগুলোর পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ঘোষণাপত্রে গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আমরা মনে করি তাদের এ অভিযোগ যথার্থ এবং এ বিষয়ে সরকারের মনযোগী হওয়া দরকার।

দৈনিক সংগ্রামে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাক্সক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এ জন্য ৬টি কমিশন গঠন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে দু’পর্বের দু’মাসেরও অধিককাল যে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টার পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। এছাড়া ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭-এর আজাদীকে উপেক্ষা করা হয়েছে।

ডা. তাহের বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরের জুলুম, নিপীড়ন, গুম-খুন, অত্যাচারের বিরুদ্ধে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা অনেক স্বৈরশাসকের পতন দেখেছি, অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে জনতার অনেক সংগ্রাম দেখেছি, কিন্তু বাংলাদেশের ২৪ এর সরকার পতনের যে দৃশ্য, সেটা একেবারেই ব্যতিক্রম। এ কৃতিত্ব জনগণেরই। সকল রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী- শিক্ষক-অভিভাবক, হকার, শ্রমিক শেষ দিকে জুলাইতে এসে আন্দোলনটা এমন একটা সার্বজনীন রূপ লাভ করে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। বাংলাদেশে আর যেন ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে, আবারো যেন সে দুঃশাসন ফিরে আসতে না পারে, দেশে ইনসাফপূর্ণ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কায়েম হবে-সে আকাক্সক্ষা ছিল জনগণের। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সভা-সমাবেশ করার অধিকার, বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে আপামর জনসাধারণ।’

তিনি বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭-এর আজাদীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই; যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল; সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।’ তার এ বক্তব্য যথার্থ। জামায়াত ছাড়াও আরো কয়েকটি প্রধান দল অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছে।

আমরা মনে করি যে জামায়াতসহ দলগুলোর এসব বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। আমরা লক্ষ্য করছি, যে ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন কীভাবে তা কার্যকর করা হবে তা উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে বলে জামায়াতসহ বিভিন্ন দল যে কথা বলেছে তাও তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। আমরা মনে করি জুলাই ঘোষণাপত্রে উপরে উল্লেখিত জনআকাক্সক্ষার অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কবরেন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এই জনআকাক্সক্ষা পূরণ খুবই জরুরী বলেও আমরা মনে করি।