কিছু পাহাড়ি নেতার ‘সেনা হটাও’ স্লোগানের তাৎপর্য কী? পাহাড় কি দেশের সার্বভৌমত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়? পৃথিবীর সব দেশের পাহাড়েই সেনারা অবস্থান করে প্রয়োজন মতো। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতিটি পাহাড়েই রীতিমত দাপট চলছে সেনাদের। কাশ্মীর, লাদাখ, নাগাল্যান্ড, আসাম কিংবা মনিপুর-সবখানেই সেনাক্যাম্প, ব্যাংকার আর পাহাড়ের প্রতিটি গিরিপথে চোখে পড়বে চেকপোস্ট। শুধু কাশ্মীরেই অবস্থান করছে সাত লাখ সেনা। শুধু ভারতে নয়, চীন, পাকিস্তান, নেপালের পাহাড়েও রয়েছে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি। অথচ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনা উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বারবার। কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় কতিপয় পাহাড়ি নেতা প্রায়ই সেনা হটানোর স্লোগান দিচ্ছেন। এতে যুক্ত হয়েছেন দেশের তথাকথিত কিছু বাম ও সুশীল সমাজের সদস্যও।

একটি জাতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত নিজের পাহাড়ে সেনা নামিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের নামে রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করে না। কাশ্মীরে সেনা অভিযানে প্রতিদিন গড়ে সাত-আটজন নিহত হচ্ছে। নাগাল্যান্ডে নাগাবিদ্রোহ দমনে অন্তত ৬০ বছর ধরে সেনা মোতায়েন রেখেছে ভারত। অরুণাচল প্রদেশে চীন-ভীতির অজুহাতে প্রতিটি পাহাড়ি এলাকায় সেনা ঘাঁটি স্থাপন করেছে ভারত। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত নিজের নিরাপত্তাকে সামনে রেখে পাহাড় নিয়ন্ত্রণে সেনাদের ব্যবহার করছে, কিন্তু বাংলাদেশের পাহাড়ে সেনা মেতায়েন দেখলেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, ভারতের আচরণ দ্বিমুখী। নিজেদের পাহাড়ে সেনা দিয়ে দমননীতি চালায়, অথচ বাংলাদেশের পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এটা কেবল রাজনৈতিক নয়, কূটনৈতিক চক্রান্তও বটে। বাংলাদেশকে দুর্বল করার জন্য তারা পাহাড়কে অস্থিতিশীল রাখতে চায়।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে সেনা ক্যাম্পের সংখ্যা সাড়ে চারশ থেকে কমে দাঁড়ায় ২৩২-এর। এরপর থেকেই ইউপিডিএফসহ নানা সন্ত্রাসীগোষ্ঠী নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণের নাকট সাজানো-সবকিছুই বেড়ে যায়। এসব ঘটনার পরপরই একটি গোষ্ঠী বিশেষ মতলবে ‘সেনা হটাও’ স্লোগান তোলে। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, এর পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ মদত আছে। কারণ ইউপিডিএফের অন্তত ছয়টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে ভারতের মিজোরামে। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে তারা বাংলাদেশের ভেতরে হামলা চালায়। পাহাড়ে দায়িত্বপালনকারী বাংলাদেশের এক ব্রিগেড কমাণ্ডার গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের হাতে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। ইউপিডিএফ ভারতের মিজোরাম থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় তারা প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশ করছে। সেনাক্যাম্প ছাড়া এসব রোধ করা সম্ভব নয়। এ কারণে, আমাদের অন্তত আড়ইশ নতুন ক্যাম্প স্থাপন জরুরি।

এদিকে খাগড়াছড়ি জোনের এক লে. কর্ণেল বলেন, আজ মিথ্যা ধর্ষণের নাটক সাজানো হলো, কাল হয়তো আরও বড় ষড়যন্ত্র করা হবে। প্রতিটি ঘটনায় ‘সেনা হটাও’ স্লোগান তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেনা না থাকলে পাহাড়ের আইন-শৃংখলা কারা দেখবে? এদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, কেউ কেউ ‘সেনা হটাও’ স্লোগান তোলে; কিন্তু তারা বলে না সেনাছাড়া পাহাড়ে চাঁগদাবাজি, খুন, অপহরণ কে থামাবে? এর পেছনে আন্তর্জাতিক রাজনীতি আছে। ভারতের কৌশল হলো, বাংলাদেশের পাহাড় অস্থিতিশীল রাখা, যাতে চট্টগ্রাম বন্দর ও ট্রানজিট রুটে তাদের প্রভাব বাড়ে। আমাদের দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের মূল্যায়নে পার্বত্য পরিস্থিতি আমাদের কাছে স্পষ্ট। ভারতের আগ্রাসন ও পার্বত্য সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা রোধ করতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই পার্বত্য এলাকায় সেনাক্যাম্প বাড়াতে হবে। ভারতের সমালোচনা কিংবা তথাকথিত সুশীল ও বাম নেতাদের মতলবী বক্তব্যকে গ্রাহ্য করলে চলবে না। দেশের সার্বভৌমত্য রক্ষায় যা করার তা-ই করতে হবে।