মানুষ আনন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আনন্দ করতে গিয়ে প্রাণহানি কাক্সিক্ষত নয়। বেখেয়ালে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর কয়েকটি ঘটনা পর পর ঘটেছে। ফলে মানুষকে তা ভাবিয়ে তুলছে। গতকাল দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত ‘ভিডিও করতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় রাফিদের মৃত্যু’—শীর্ষক খবরে বলা হচ্ছে, ২ মে বিকেলে পৌনে ৫টার দিকে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় রেল লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ভিডিও করছিলেন তিনি। এ সময় আরেক দিক থেকে আসা আরেকটি ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ যায় তার। ইশতিয়াক আহমেদ রাফিদ রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকার খিলক্ষেতে খালার বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন তিনি।
এভাবে একটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। কয়েকদিন আগের আর একটি খবর -মাসুম মিয়া (২১) ও ইতি খাতুন (১৯)। নবদম্পতি। তারা গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। উঠেছিলেন টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ভাড়া বাসায়। গত ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় উত্তরা ৮ নম্বর রেল গেট ও কোটবাড়ির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় রেললাইনে তুলছিলেন সেলফি। আর এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যমুনা এক্সপ্রেসে কাটা পড়ে এ দম্পতির মৃত্যু হয়। মেয়েটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার স্বামীকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সর্বশেষ গত বুধবার বিকালে রাজধানীর মগবাজারে পেয়ারাবাগ রেলগেট এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মো. আমির হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তির দু’পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
শুধু রাফিদ বা নবদম্পতির মর্মান্তিক মৃত্যু এবং আমির হোসেনের দু’পা হারানোর ঘটনা নয়, প্রায়ই ঘটছে এসব ঘটনা। আর তা ঘটছে অসতর্কতার কারণে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ঢাকা রেলওয়ে থানা প্রতি মাসে এমন ২৫ থেকে ৩০টি ঘটনা ডায়েরিভূক্ত করে। রেল স্টেশন, রেললাইনসংলগ্ন এলাকার মসজিদ ও স্কুলে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়। তবে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। রেলওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, চলন্ত ট্রেনে ওঠানামা, ছাদে ভ্রমণ, বগির সংযোগস্থল বাফারে বসা, ট্রেনের দরজার হাতলে ঝুলে যাতায়াত, রেললাইনের পাশ দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে হাঁটা, রেললাইনে বসে থাকা, অসতর্কভাবে রেললাইন পার হওয়া, অনেকেই আবার কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে, মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় এবং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েও ট্রেনে কাটা পড়ছে। ট্রেনে কাটা পড়ে বছরে ১ হাজারের বেশি মৃত্যু হয় বলে রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। ২০২৪ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু ঘটনায় মোট মামলা হয় ৯৯৮টি। মোট লাশ উদ্ধার করা হয় ১ হাজার ১৭ জনের। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯৪ এবং নারী ২২৩ জন। কানে ইয়ারফোন থাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় ৭৬ জনের। ট্রেন লাইনের ওপর বসে গল্প ও চলাচলের কারণে মৃত্যু হয় ৫০৪ জনের। ২০২৩ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় মোট মামলা হয় ১ হাজার ৫৪টি। মোট লাশ উদ্ধার করা হয় ১ হাজার ৬৪ জনের। এর মধ্যে পুরুষ ৮২৬ এবং নারী ২৩৮ জন। কানে ইয়ারফোন থাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় ১৮ জনের। রেললাইনের ওপর বসে গল্প ও চলাচলের কারণে মৃত্যু হয় ৫০২ জনের।
দেখা যাচ্ছে, অসর্কতার কারণে প্রতিবছর বহু প্রাণ এভাবে অকালে ঝরে যাচ্ছে। আমরা বলবো এ ব্যাপারে আরো সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। রেল মন্ত্রণালয় বিষিয়টি ভেবে দেখতে পারে। রেলের প্রচলিত আইনে রেললাইন ধরে হাঁটা অবৈধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এ আইন প্রতিনিয়তই ভঙ্গ করছেন পথচারীরা। তাই প্রতিনিয়তই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বাস্তবতা হচ্ছে রেল লাইন মানুষকে পার হতেই হয়। কিন্তু অসতর্কভাবে পার হওয়ার বিষয়টি রোধ করা গেলে এই বেঘোরে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে।