গাজায় পবিত্র ঈদের আগ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। মঙ্গলবার ভোরে গাজা উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৩৬ জন। এসব করছেন ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একটা মানুষ কতটা নির্দয় হলে ভোর রাতে এই পবিত্র রমযান মাসে এমন জঘন্য হামলা চালাতে পারে? শুধু তাই নয়, পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর হচ্ছে নেতানিয়াহু বলেছেন, এটা নাকি হামলার শুরু মাত্র। দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দখলদার ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় নতুন করে চার শতাধিক নিরপরাধ মানুষকে হত্যার পর হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘এটা কেবল শুরু’। গাজায় ইসরাইলের নতুন হামলায় অন্তত ৪৩৬ জন শহীদ হয়েছেন, এর মধ্যে ১৮৩টি শিশু রয়েছে। মঙ্গলবার রাতভর এবং বুধবার সকালেও গাজায় হামলা চালানো হয়েছে। এ অবস্থায় রক্তপিপাসু নেতানিয়াহু গাজায় বর্বর হামলা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে আমরা পূর্ণশক্তিতে যুদ্ধ শুরু করেছি’। অন্যদিকে হামাসের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেন, হামলার মধ্যেই তা চলবে।
হামলার চিত্র তুলে ধরে আল জাজিরা বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের অনেকে তখন গভীর ঘুমে। কেউ কেউ সাহ্রির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এমন সময় শুরু হয় একের পর এক বোমা হামলা। রাতের অন্ধকারে চলতে থাকে আহত রক্তাক্ত মানুষের আর্তচিৎকার আর আতঙ্কিত মানুষের দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। যুদ্ধবিরতির মধ্যে আবার দুঃস্বপ্নের রাত ফিরে এল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এ উপত্যকায়। আমরা ভেবে পাই না বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী এতটা দায়িত্বহীন ও নিষ্ঠুর কি করে হতে পারেন? ইতোমধ্যে বিগত দেড় বছরে তিনি ৪৮ হাজার গাজাবাসীকে খুন করেছেন। আর কত রক্ত তিনি চান? এত মৃত্যুর পরও তিনি নতুন করে কি শুরু করতে চান?
গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এ যুদ্ধবিরতির পর এবারই গাজায় সবচেয়ে জোরালো হামলা চালানো হয়েছে। গাজার বেইত লাহিয়া, রাফা, নুসেইরাত ও আল-মাওয়াসি এলাকায় মঙ্গলবার বিমান হামলা চালানো হয়। এতে এসব এলাকার মানুষ গত জানুয়ারি থেকে যে আপেক্ষিক শান্তি বোধ করছিলেন, তা কার্যত ভেস্তে গেছে। হাসপাতালগুলো আবারও হতাহতে ভরে গেছে। নেতানিয়াহুর এ হত্যা লিপ্সা এমন স্থানে গেছে যে তাকে থামানো না গেলে মানব জাতির একটি চরম ট্রাজেডি হিসেবে তা প্রতিভাত হবে। আমরা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও নেতৃস্থানীয় বিশ্ব সংস্থার প্রতি এ বিষয়ে দষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
আশার কথা নতুন করে গাজা উপত্যকায় হামলা শুরুর নিন্দা জানিয়েছে মিসর, জাতিসংঘ, বিভিন্ন দেশ। হামাস আর ইসরাইলের মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনায় মধ্যস্ততা করছে মিসর। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তামিম খাল্লাফ বলেন, গাজায় বিমান হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সে সঙ্গে এটা যুদ্ধ পরিস্থিতি ‘বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ার’ আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। আমরাও তা মনে করি। এ পরিস্থিতিতে ইসরাইলী এ হত্যালীলা থামিয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসা দরকার।
আমরা দেখছি আধিপত্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ইসরাইল গাজায় কয়েক ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তে পরিবর্তন আনতে চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় করা চুক্তিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। এর ফলে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। ২ মার্চ শেষ হওয়া প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপ চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রথম চুক্তি অনুসারে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার কথা। নেতানিয়াহু সেটাও লঙ্ঘন করেছে। এখন সে আলোচনায় গতি সৃষ্টি করে দ্বিতীয় ধাপের চুক্তি সম্পাদনই রক্তপাত বন্ধের উপায়। হামলা বন্ধ করে শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেয়া হবে নেতানিহুর জন্য উত্তম সে কথা আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। কেননা এখনো অর্ধশতাধিক জিম্মি মুক্ত হয়নি। তাদের মুক্ত করতে চাইলে তাকে চুক্তির পথে ফিরে আসতেই হবে। হামলার মধ্যে আলোচনা চলবে বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা কোন কাজের কথা নয়। হামলা বন্ধ করেই আলোচনায় ফিরে আসতে হবে তাকে।