চলতি সপ্তাহ জুড়েই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকার পক্ষে বিশ্বজুড়ে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ৭ এপ্রিল বিশ্বের অন্যসব দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ নামক কমসূচি। কর্মসূচিটি মূলত ফিলিস্তিনিদের একটি পদক্ষেপ। পশ্চিম তীর, নাবুলস ও জেনিনসহ অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের মানুষ তাদের গাজাবাসী ভাইবোনকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার প্রতিবাদে এ দিনটিতে কোনো কাজ না করার, ইসরাইলকে কোনো সহযোগিতা না করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালনের কর্মসূচি দেয়।

ফিলিস্তিনের এ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা জানায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তিকামী মানুষ। বিশ্বের বহুদেশেই এ দিনে লোকজন অফিসে যায়নি, বাচ্চারা স্কুলে যায়নি, কলেজ ভার্সিটিতেও ক্লাস হয়নি। বাংলাদেশেও ইসলামী ছাত্র সংগঠনগুলো ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদাভাবেও এ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা জানায়। ফলে বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেদিন বন্ধ ছিল। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বর্জন করে তাদের ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের প্রতি সমবেদনা ও ইসরাইলী বর্বরতার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে এবং রাজপথে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

একইদিনে, বাংলাদেশের বেশ কিছু ইসলামিক দল রাজধানীসহ সারা দেশে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের নির্বিচারে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। এসব কর্মসূচিতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নেন। কার্যত বাংলাদেশের মানুষ আগাগোড়াই ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং ইসরাইলের প্রতি তারা ঘৃণা লালন করে। তাই চোখের সামনে গাজার নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষগুলোকে এভাবে নিহত হতে দেখে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এবং এরকম কিছু কর্মসূচির জন্য তারাও অপেক্ষায় ছিল।

এ কারণে নানা দল বা ফোরামের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালিত হলেও কার্যত কর্মসূচিগুলো আর দলীয় থাকেনি। ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ প্রমাণ করে দিয়েছে, জায়নবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনকে দখল করে নেয়ার নোংরা উদ্দেশ্যে যে অভিযান পরিচালনা করছে, এর কোনোটিই তারা সমর্থন করে না। বিশ্বের অনেক দেশেই ৭ এপ্রিল বিক্ষোভ পালিত হয়েছে। বাংলাদেশে গতকাল ৮ এপ্রিলেও বিক্ষোভ হয়েছে। আগামী ১২ তারিখে মার্চ ফর প্যালেস্টাইন নামক একটি বিশাল প্রোগ্রাম পালিত হতে যাচ্ছে। এটি কোনো দলের প্রোগ্রাম নয়। সমাজের সবশ্রেণীর মানুষ, বিশেষ করে ওলামা মাশায়েখ, লেখক, সাংবাদিক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এমনকী খেলোয়াড়, ক্রীড়াবিদসহ সমাজের সর্বস্তরের সেলিব্রেটিরা তাদের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে আলাদা আলাদা করে এই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিজেরাও তাতে অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ১২ তারিখের প্রোগ্রামে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ একটি জমায়েত হতে যাচ্ছে।

বিক্ষোভ চলমান থাকা অবস্থায় ইসরাইলী পণ্য বয়কট করার নামে দেশের কয়েকটি স্থানে কিছু দোকান ও শোরুমে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পণ্য বয়কটের শান্তিপূর্ণ আহ্বানের সাথে এ ধরনের সহিংসতা ও ভাংচুরের কোনো সম্পর্ক নেই। এত বিশাল সব মিছিল হচ্ছে, কোনো মিছিল থেকেই কাউকে কোনো ধরনের ভাংচুরের নির্দেশনা দেয়া হয়নি এবং মিছিল থেকে কোনো ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেনি। অথচ বৃহৎ জমায়েতগুলোর বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘটিত ঘটনাগুলো অনেকের মাঝেই দুশ্চিন্তার উদ্রেক করেছে। এগুলো পরিকল্পিত কিনা এবং এর মাধ্যমে দেশকে বহির্বিশ্বে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে কিনা-সে প্রশ্নও সামনে এসেছে।

আমরা আশা করবো, অন্যায়ের প্রতিবাদ যেন ন্যায়নিষ্ঠভাবেই হয়। ইসরাইল গাজার সাথে যে অন্যায় করছে তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা যেন আইন হাতে তুলে না নেই। তাহলে নতুন করে অন্যায়ের পথ প্রশস্ত হবে। সবচেয়ে বড়ো কথা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বাংলাদেশকে নিয়ে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তিসহ দেশবিরোধী মহলগুলো যেসব ষড়যন্ত্র করছে, কোনোভাবেই যেন আমরা এর ফাঁদে না পড়ি, তা নিশ্চিতকরণে সবাইকে দায়িত্বশীল ও সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।