মুঠোফোন এখন ঘরে ঘরে, মানুষের হাতের মুঠোয়। গ্রাম-গঞ্জের কৃষক ও সাধারণ মানুষের হাতেও শোভা পাচ্ছে মুঠোফোন। উপলব্ধি করা যায়, মুঠোফোন তথা স্মার্টফোন এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তবে মুঠোফোনের ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এ নিয়ে আমেরিকা ও চীনের পর্যালোচনা আমরা লক্ষ্য করেছি। এখন জাপানেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ২৩ আগস্ট টোকিও থেকে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয, মুঠোফোন মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করছে। এর প্রভাব পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। তাই জাপানের তোয়োয়াকে সিটি কর্তৃপক্ষ সেখানকার বাসিন্দাদের মুঠোফোন ব্যবহার সীমিত করে দেওয়ার কথা ভাবছে। সেখানকার কর্তৃপক্ষের একটি প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন কাজের বাইরে বা শিক্ষার্থীদের স্কুলের সময়ের বাইরে সর্বোচ্চ দুই ঘন্টা মুঠোফোন ব্যবহার সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে এ নিয়ম না মানলে কোনো শাস্তির বিধান রাখা হযনি। মুঠোফোন ব্যবহার সীমিত রাখার এ নিয়মটি শহরের সব বাসিন্দার জন্য প্রযোজ্য হবে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে শহরটির মেয়র মাসাফুমি কোকি বলেন, এ প্রস্তাবের লক্ষ্য হলো অতিরিক্ত মুঠোফোন ব্যবহারের কারণে যে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয় তা প্রতিরোধ করা। এ সবের মধ্যে ঘুম না হওয়ার সমস্যাও রয়েছে। খসড়া প্রস্তাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাত নয়টার পর স্মার্টফোন ব্যবহার না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আর জুনিয়র হাইস্কুল ও ঊর্ধ্বতন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের রাত দশটার পর ফোন ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এ প্রস্তাব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে পরিকল্পনাটিকে অবাস্তব বলে মন্তব্য করেছেন। একজন ব্যবহারকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য আমি বুঝি, কিন্তু দু’ঘন্টার সীমা মেনে চলা অসম্ভব।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘দু’ঘন্টায় আমি স্মার্টফোনে একটি বই পড়া বা একটি সিনেমা দেখাও শেষ করতে পারি না।’ অনেকে বলছেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত পরিবারের নিজস্ব বিষয় হওয়া উচিত। সমালোচনার মুখে মেয়র স্পষ্ট করে জানান, দুই ঘণ্টার সীমা বাধ্যতামূলক নয়। তিনি আরও বলেন, এ নির্দেশনায় স্বীকার করা হয়েছে যে, স্মার্টফোন দৈন্দিন জীবনে উপকারী এবং অপরিহার্য। উল্লেখ্য, অধ্যাদেশটি আগামী সপ্তাহে বিবেচনা করা হবে এবং পাস হলে অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।

২০২০ সালের জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কাগাওয়া প্রদেশে প্রথমবারের মতো একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, যেখানে শিশুদের প্রতিদিন এক ঘণ্টা এবং স্কুল ছুটির সময় প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট মুঠোফোনে গেম খেলার সীমা নির্ধারণ করা হয়। এতে আরো প্রস্তাব করা হয়েছিল, ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের রাত ৯টার পর স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়। আর ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করা হয় রাত ১০টা পর্যন্ত। শিশু ও পরিবার বিষয়ক এজেন্সির মার্চে প্রকাশিত এক সীমাক্ষা থেকে জানা যায়, জাপানি কিশোরেরা সপ্তাতের কার্যদিবসে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ ঘন্টার কিছু বেশি সময় অনলাইনে সময় কাটায়। শুধু জাপানে নয়, অন্যান্য দেশের চিত্রও প্রায় একই রকম। তাই মুঠোফোন ব্যবহারে সময়সীমা ও শৃঙ্খলা বিধান অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।