নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ট্রাক ও মাইক্রোবাস সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। গতকাল দৈনিক সংগ্রাম অনলাইন জানিয়েছে, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ট্রাক ও মাইক্রোবাস সংঘর্ষের ঘটনায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৮ জনে। গত বুধবার সকাল দশটার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আইড়মারি ব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, জাহিদুল ইসলাম, তার স্ত্রী শেলি, আঞ্জুমান আরা, আন্নি, লিমা, আনু বেগম, সীমা খাতুন ও মাইক্রোবাস চালক শাহাবুদ্দিন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ থেকে মাইক্রোবাসে করে সিরাজগঞ্জে রোগী দেখতে যাচ্ছিল কয়েকজন। পথিমধ্যে মাইক্রোবাসটি আইরমাড়ি ব্রীজ একাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই চার নারীসহ পাঁচজন নিহত হন।

আমরা মনে করি সড়কে এতগুলো তাজাপ্রাণ এভাবে ঝরে যাওয়া মোটেই কাম্য হতে পারে না। দেশে মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক আইন কানুন ও বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয় না। চলে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। আছে বেপরোয়া চলাচল। নাটোরের দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সংঘর্ষ ঘটেছে। উভয় যানবাহন দ্রুতগামী ছিল বলে মনে করার কারণ রয়েছে। তারা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি বলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কথা হচ্ছে এভাবে আর কতদিন বাস ট্রাক মাইকোবাস চলবে? মূলত সড়কে শৃঙ্খলার অভাব শতভাগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখানে চালকের সচেতনতার যেমন অভাব আবার ট্রাফিক আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ নেই। অভিজ্ঞতা না থাকলেও ঘুষের বিনিময়ে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বর্তমান সরকার আগের সে ধারা থামতে পেরেছেন কি না সেটাও প্রশ্ন বটে। আমরা মনে করি ধৈর্য, সতর্কতা এবং সর্বোপরি জন সচেতনতাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারে। এক্ষেত্রে চালক ও পথচারীদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন। আর হাইওয়ে পলিশের এ বিষয়টি দেখভাল করাও দরকার আছে। গতি নিয়ন্ত্রণ করা, তা অমান্য করা হলে শাস্তির বিধান থাকা প্রয়োজন।

একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গত বছর ৬ হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৬০৮ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মৃত্যু বেড়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, আর আহতের সংখ্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত বছর রেলপথেও ৪৯৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫১২ জন নিহত এবং ৩১৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত, ২৬৭ জন আহত এবং ১৫৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৬ হাজার ৯৭৪টি দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ২৩৭ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ১৯০ জন আহত হয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বছরের গত ছয়মাসে সারা দেশে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৭৭৮ জন। একই সময়ে ১৭ হাজার ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। গবেষণা সংস্থা সেভ দ্য রোডের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ১৭ হাজার ৯৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিসহ থ্রি হুইলার ধরনের যানবাহন দুর্ঘটনায় ৭৯৫ জন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৬৭৩ জন, বাস দুর্ঘটনায় ৮২৫ জন এবং ট্রাক-পিকআপ-লরি দুর্ঘটনায় ৪৮৫ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া নৌপথে ৬১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১৪ জন এবং আহত ৪৫১ জন। রেলপথে ৫২৬টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৮৪ জন এবং নিহত ১৪ জন।

বিশেষজ্ঞরা সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে ‘কাঠামোগত হত্যাকা-’ হচ্ছে বলে মত দিয়েছেন। তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সুফল পরিবহন খাতে পড়েনি। তারো আরো বলেন, রাস্তা ঠিক থাকলে, চালকের লাইসেন্স থাকলে, সিগন্যাল ঠিক থাকলে এবং সবাই নির্দেশনা মেনে চললে দুর্ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনা যেতে পারে। মানুষ চাইলেই এগুলো দূর করতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে এভাবে পথে মৃত্যুর মিছিল কি চলতেই থাকবে? আমরা মনে করি অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। সড়কে দুর্ঘটনা কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।