ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার খবর এখন পত্রিকাজুড়ে। ২৫ এপ্রিল রয়টার্স পরিবেশিত খবরে বলা হয়, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। হামলায় পাকিস্তানের মদদ আছে বলে অভিযোগ তুলে গত বুধবার প্রতিবেশী দেশটির নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাঁচটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। এর জবাবে বৃহস্পতিবার ভারতের নাগরিকদের ভিসা বাতিল, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত, ভারতের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ বেশ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। আগের দিন ভারত যেসব পদক্ষেপ নেয়, সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা। এর জবাবে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ওই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান যে পানি পাবে, তার প্রবাহ থামানো বা অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার যে কোনো চেষ্টা যুদ্ধের শামিল বলে বিবেচনা করা হবে। এ পানির প্রবাহ রক্ষায় পূর্ণ শক্তি প্রয়োগেরও ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান।
এদিকে কাশ্মীরে হামলাকারী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২৪ এপ্রিল ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, যারা হামলা চালিয়েছে এবং যারা নীলনকশা সাজিয়েছিল, তাদের কল্পনাতীত পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ নরেন্দ্র মোদি বলেন, এসব সন্ত্রাসীদের যত সামান্য ভূমিই থাকুক না কেন, এখনই সময় এসেছে তা ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার। ১৪০ কোটি ভারতীয়র ইচ্ছাশক্তি সন্ত্রাসীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে কাশীরের পেহেলগামের জনপ্রিয় পর্যটককেন্দ্র বৈসারণ উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের একজন ছাড়া সবাই ভারতীয়। নিহত একমাত্র বিদেশী পর্যটক নেপালের নাগরিক। ভারত যখন পাকিস্তানকে হুমকি দিচ্ছে, তখন ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি প্রকাশ করেছে ভিন্ন রকম খবর। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার নেপথ্যে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির একজন বিধায়ক। এ কারণে বিধায়ক আমিনুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ও গত মঙ্গলবার পেহেলগামে হামলার ঘটনাটিকে ‘সরকারের ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেন বিধায়ক আমিনুল ইসলাম। তিনি আসামের বিরোধী দল অল ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এআইইউডিএফ) একজন বিধায়ক। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে আসাম পুলিশ বলেছে, রাজ্যের বিধায়ক আমিনুল ইসলামের বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক মন্তব্যের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার এ মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বিরূপ পরিস্থিতি তৈরির শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে তাকে আইন অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়েছে।
পেহেলগামে হামলার ঘটনায় ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জড়িত বলে উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভারতীয় নাগরিক সায়ক ঘোষ চৌধুরী। বুধবার কাশ্মীরে নিজের আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করা হবে কি হবে না, সেটা আমার কাছে তুচ্ছ বিষয়। আমি সাধারণভাবে বিশ্বাস করি না যে, অমিত শাহ-অজিত দোভালদের সাহায্য ছাড়া কোনো অস্ত্র কিংবা অস্ত্র চালানোর লোক কাশ্মীরে ঢুকতে পারে। আগে তবুও অনেক জায়গা ছিল, যেখান দিয়ে জঙ্গী ঢোকার সুযোগ ছিল, এখন প্রযুক্তির উন্নতির পরে সেসব জায়গা অতি সহজেই নজরদারি করা যায়। আর আমি কার্গিল যুদ্ধের পর কাশ্মীরে গেছি। আমি কোনদিন শুনিনি যে, জঙ্গীরা পর্যটকদের হত্যা করে।’ এমন ধারার বক্তব্য আরও অনেকে দিয়েছেন, যারা ভারত সরকারের বক্তব্য বিশ্বাস করছেন না। আমরা জানি, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দোষারোপ তথা ব্লেমগেমের চর্চা একটি পুরানো বিষয়। অনেক সময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, আবার অনেক সময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বিষয়টি ভালোভাবেই জানেন। নানা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে অনেক কিছুই করতে হয়। তাই পেহেলগাম ঘটনার প্রকৃত রহস্য জানতে আমাদের হয়তো আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।