বলয়ের রাজনীতি আমরা দেখেছি, এখন চলছে মঞ্চের রাজনীতির। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবার একমঞ্চে উপস্থিত হলেন প্রভাবশালী তিন নেতা। পুরো বিশ্বের নজর এখন চীনে। সেখানকার তিয়ানজিন শহরে রোববার থেকে শুরু হলো দু’দিনের সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা তথা সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলন। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈশ্বিক নীতির বিরুদ্ধে একমঞ্চে দেখা যাচ্ছে সি চিন পিং, ভøাদিমির পুতিন এবং নরেন্দ্র মোদিকে। ইতিমধ্যে বৈরিতা ভুলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দিতে শনিবার তিয়ানজিনে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও। চীনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্মেলনে এসসিও-এর ১৬ আনুষ্ঠানিক অংশীদার ও পর্যবেক্ষক দেশের প্রতিনিধি দলও অংশ নেবেন। এদের মধ্যে রয়েছে কম্বোডিয়া, মিশর, সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত, এমনকি ন্যাটো সদস্য তুরস্কও। এছাড়া বেইজিং কয়েকজন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিয়ানজিন নগরজুড়ে ইংরেজি, রুশ ও চীনা ভাষায় লেখা ব্যানারে সম্মেলনের প্রচার চলছে।
তিয়ানজিন থেকে সিএনএন জানায়, বেইজিংকে বৈশ্বিক নেতৃত্বের কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। চীন দেখাতে চাইছে, পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাল্টা ভারসাম্য তৈরিতে তারা সক্ষম। চীনের কর্মকর্তারা বলেছেন, এবারই হচ্ছে এসসিও’র সবচেয়ে বড় সম্মেলন। কূটনীতি ও জাকজমকের এ মঞ্চ সি চিন পিং তুলে ধরবেন তার দেশকে একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে। এমন সময় এই আয়োজন হচ্ছে, যখন বিশ্বের শীর্ষ শক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে তার জোটগুলোতে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এ সম্মেলন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকেও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কা বৈঠকের মাত্র দু’সপ্তাহ পর তিনি এ সম্মেলনে যোগ দিলেন। সি চিন পিং এবং পুতিন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাকে অন্যায্য মনে করেন। এবারের সম্মেলন বিশ্বব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য চীন ও রাশিয়ার যৌথ প্রচেষ্টার একটি ইঙ্গিত বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। উল্লেখ্য, এসসিওর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান, পাকিস্তান, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান।
পৃথিবীতে এক সময় আমরা বলয়ের রাজনীতি দেখেছি, সেখানে এক ধরনের আদর্শবাদ ছিল। আদর্শ সমুন্নত রাখার জন্য যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন; তা এখন আর বর্তমান নেই। আদর্শিক বিরোধের বদলে স্বার্থের বিরোধ এখন প্রবল। এ স্বার্থ অর্থ-সম্পদ ও ভোগবিলাসের স্বার্থ, সাথে যুক্ত হয়েছে নেতৃত্বের অহংকার। ফলে বিশ্বে এখন সৎ ও মহীয়ান নেতার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় না। ইনসাফভিত্তিক মানবিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ার আকাক্সক্ষাও তাই অনুপস্থিতি। ক্ষুদ্র স্বার্থকেন্দ্রিক যে মঞ্চগুলো লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেখানে চাতুর্য ও কূটনীতির কসরত প্রাধান্য পাবে। কোনো মঞ্চে নৈতিকতা এবং মহত্বর ভাবনার আলো প্রজ্জ্বলিত না হলে, প্রযুক্তির আলো দিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের আবহে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তো জানিয়ে দিলেন, স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু বলে কিছু হয় না। স্থায়ী শুধু ‘স্বার্থ’ ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিরভি আয়োজিত ‘ডিফেন্স সামিট’-এ যোগ দিয়ে শনিবার তিনি এ মন্তব্য করেন। এসসিও সম্মেলনে প্রভাবশালী তিন নেতা তো এক মঞ্চে উপস্থিত হলেন। আপন আপন স্বার্থই এখানে মূল বিষয়। ফলে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছেড়ে দিতে পারেন স্বার্থের কারণে, অন্যের হাত ছেড়ে দিতেও তারা বিলম্ব করবেন না। মহত্তর ভাবনামুক্ত নেতারা আসলে মানবজাতিকে ভালো কিছু উপহার দিতে সমর্থ্য নন।