আকরাম বশিরের তিন সন্তান ক্ষুধায় কাঁদছে। পিতা একেবারে নিরুপায়। কারণ, ওরা গাজার বাসিন্দা। প্রশ্ন জাগে, গাজায় কি ক্ষুধার প্রদর্শনী চলছে? এমন প্রদর্শনীর জন্য সভ্যতাকে কোন নামে অভিহিত করা যায়? সন্তানদের মুখে সামান্য খাবারও তুলে দিতে পারছেন না আকরাম। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরানো সন্তানদের মিত্থ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলছেন ইসরাইলের অবরোধ শেষ হলেই তারা খাবার পাবে। তবে এ প্রতিশ্রুতি যে পূরণ হবার নয়, তা ভালো করেই জানেন আকরাম। অশ্রুসিক্ত চোখে আকরাম এসব কথা বলছিলেন মিড ইস্ট আইর প্রতিবেদককে। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সী আকরাম বশিরের দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় হয় সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মুখে সামান্য খাবার জোগান দেওয়ার প্রচেষ্টায়। অনাহারে তাদের অবস্থার অবনতি ঘটছে দিনদিন।

উল্লেখ্য, ২ মার্চ গাজার সীমানা সম্পূর্ণ সিল করে দেয় ইসরাইল। এতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডটিতে সব সাহায্য এবং সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যার মধ্যে রয়েছে মৌলিক খাদ্যসামগ্রী, শিশুদের ফর্মুলেটেড ফুড এবং খাবার পানি। তীব্র অবরোধের মুখে মে মাস পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ভয়াবহ ক্ষুধার মুখোমুখি হয়েছিল। এখন সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ লাখে। এত বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী বর্তমানে অনাহারে-অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছেন। আকরাম বশির জানান, খাবারের অভাবে বাচ্চাদের ওজন কমে গেছে, অতিরিক্ত ঘুমাচ্ছে, মনোযোগ দিতে ওদের কষ্ট হচ্ছে। শুধু বাচ্চারা নয়, বড়দের অবস্থাও করুণ। প্রাপ্তবয়স্ক বা বৃদ্ধ কারো পাতেই প্রতিদিন খাবার থাকছে না। প্রত্যেকের ওজন কমেছে। ক্লান্তি, মাথাঘোরা, দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। মাথাব্যথা ও দুর্বলতার কারণে তার বাবা বেশ কয়েকবার রাস্তায় পড়ে গেছেন। তার হাত ভেঙে গেছে। দুধ, ডিম আর পুষ্টিকর খাবার না খেলে তার হাতে জোড়া লাগবে না।

শুধু গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিরা নন, অনাহারে আছেন বিবিসির স্থানীয় সাংবাদিকরাও। ইসরাইলের সর্বাত্মক অবরোধের কারণে চলমান দুর্ভিক্ষে গাজাবাসীর মতো তারাও খাবারের জন্য লড়াই করছেন। গাজার সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিবিসি নির্ভর করে, এমন তিনজন বিশ্বস্ত ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জানিয়েছেন, খাবারের জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কীভাবে তাদের লড়াই করতে হচ্ছে এবং এক বা দুইদিন না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। গাজা শহরে কর্মরত এক সাংবাদিক জানান, ‘আমার সবসময় ক্লান্ত আর নিস্তেজ লাগে, এমনকি মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।’ তিনি জানান, ২১ মাসে ৩০ কেজি ওজন হারিয়েছেন। এদিকে গাজাজুড়ে সাংবাদিকদের মানবিক দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স, এএফপি, এপি ও বিবিসি। এক বিবৃতিতে তারা গাজার সাংবাদিকদের রক্ষার জন্য আহ্বান জানান। এতে কোনো কাজ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, সভ্যতার শাসকরাই যে ইসরাইল নামক যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্রের পক্ষ নিয়েছে।