চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের সব সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে একসঙ্গে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৫৮.৮৩। তবে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে এ বছর পাসের সংখ্যায় ব্যাপক ধস নেমেছে। বিষয়টি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ১৬ অক্টোবর সকাল ১০টায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড একযোগে নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালে গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেন। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন ছাত্রী। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেননি। আর এবারও ফল তৈরি হয়েছে ‘বাস্তব মূল্যায়ন’ নীতিতে। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৬৪.৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯.৪০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৪৮.৮৬ শতাংশ, যশোরে ৫০.২০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২.৫৭ শতাংশ, বরিশালে ৬২.৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১.৮৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭.৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১.৫৪ শতাংশ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৬১ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৬২.৫৭ শতাংশ।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত আরেকটি খবরে বলা হয়েছে, দু’দশকের মধ্যে এবার উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় সবচেয়ে কম পাসের হার রেকর্ড হয়েছে। ২০০৫ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই পাসের হার বেড়েছে বা সামান্য কমবেশি হয়েছে। কিন্তু এবার তাতে বড় ধাক্কা এসেছে। ২১ বছর পর শিক্ষার্থীদের ফলাফলে একপ্রকার ধস নেমেছে।

এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার হয়েছে ৫৭ দশমিক ১২, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ পয়েন্ট কম। অর্থাৎ এ বছর প্রায় ৪৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। শুধু পাসের হার নয়, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বিপুল পরিমাণে কমেছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, তার আগের বছর পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৫২১ জন; কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৬৩ হাজার ২১৯ জনে।

জানা যাচ্ছে, দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেননি। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার শূন্য। গত বছর শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্য̈া ছিল ৬৫টি। আবার শতভাগ পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে এক হাজার ৪৩টি। সার্বিক দিক বিবেচনায় এবার ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটেছে। আমরা মনে করি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে এই বিশাল অধোগতি কেন হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। অন্তর্বর্তী সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে। ভাবতে হবে শিক্ষক অভিভাবকদেরকেও। কারো কোন গাফলতি থাকলেতা দূর করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী অকৃতকার্য হওয়ার কারণে অনেকেই লেখা পড়া থেকে ছিটকে পড়বে। অনেকে হারিয়ে যাবে। এ ফল বিপর্যয়ের ফলাফল হতে পারে ব্যাপক। তাই এটা নিয়ে হেলা ফেলা করার সুযোগ নেই। আমরা অনুরোধ জানাব সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে শিক্ষক-অভিভাবকরাও বিষয়টি আমলে নেবেন।