শান্তির আলোচনা অবশ্যই হয়, তবে শান্তির পায়রা আকাশে আর ডানা মেলতে পারে না বরং ডানা মেলতে গিয়ে পালক হারায়। এভাবে পালক হারাতে থাকলে শান্তির পায়রা যে একসময় মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে। আকাশে আর ওড়া হবে না তার। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় বড় বড় রাষ্ট্রগুলো পায়রাকে নিয়ে শান্তির যে খেলা খেলছে, তাতে হতাশার মাত্রাই শুধু বাড়ছে। ফিলিস্তিনে এখন আর শান্তির পায়রা ওড়ে না। গাজায় পালকহারা পায়রাটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। সাদা শুকুনের নির্মম খেলা দেখেছে গাজাবাসী। এখন লাল শকুনের নিষ্ঠুরতা দেখছে ইউক্রেনবাসী। বর্তমান সভ্যতায় মজলুমদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। ফিলিস্তিন ও ইউক্রেনের মানুষদের কাছে সভ্যতার প্রহসনটা ধরা পড়ে গেছে। পারমাণবিক অস্ত্রের সামর্থ্যটাই বর্তমান সভ্যতার বড় বিষয় হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রনেতাদের ভাষায়ও পারমাণবিক অস্ত্রে তেজস্ক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
ইউক্রেনে যে কোনো পশ্চিমা দেশের সেনা মোতায়েন করা হলে, তারা মস্কোর হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য মিত্র দেশগুলোর আলোচনার মধ্যেই পুতিন এমন হুঁশিয়ারি দিলেন। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ জানান, ২৬টি দেশ ইউক্রেনকে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরমধ্যে স্থল, সমুদ্র ও আকাশসীমায় আন্তর্জাতিক বাহিনীর তদারকির বিষয়টি থাকবে। মাখোঁর বক্তব্যের পরদিনই পুতিন এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, ইউক্রেনে তাদের যুদ্ধ শুরু করার অন্যতম কারণ, পশ্চিমা সামরিক জোট ‘ন্যাটো’ যাতে ইউক্রেনকে জোটভুক্ত করতে না পারে এবং ইউক্রেনে তাদের বাহিনী মোতায়েন করতে না পারে। শুক্রবার ভøাদিভস্ককে একটি অর্থনৈতিক ফোরামে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তাই বিশেষ করে এখন সামরিক অভিযানের সময় যদি সেখানে (ইউক্রেনে) কিছু সেনা এসে হাজির হয়, সে বাস্তবতায় আমরা ধরেই নেই যে বিনাশ করার জন্য তারা বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।’ পুতিন আরও বলেন, ‘আর যদি এমন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যা শান্তির দিকে নিয়ে যাবে, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে, তাহলে আমি ইউক্রেনের ভূখন্ডে তাদের (পশ্চিমা সেনাদের) উপস্থিতির কোনো অর্থ দেখি না; এ বিষয়ে এটিই আমার শেষ কথা।’
পুতিনের শেষ কথা তো জানা গেল। তবে এ কথায় শান্তি বা সমঝোতার কোনো বার্তা নেই, আছে হুমকি এবং চাতুর্যের কসরৎ। এমন কথা আমরা আগেও শুনেছি। তবে সে কথা কখনো বলেছেন বাইডেন, কখনো বা ট্রাম্প। এখানে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কথাও উল্লেখ করতে হয়। তবে তার কথা সবচাইতে নিকৃষ্ট। যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহুর কথায় শান্তির কোনো বার্তা থাকে না, থাকে আগ্রাসন, উৎখাত ও হত্যার হুমকি। এদের নিয়েই তো বর্তমান সভ্যতা। এ সভ্যতায় মানুষের বসবাস অসম্ভব হয়ে উঠছে। যেখানে ন্যায় থাকে না, বরং থাকে মারণাস্ত্রের অহংকার-সেখানে মানুষ বসবাস করবে কেমন করে? প্রশ্ন জাগে, এ পৃথিবীতে সভ্যতার শাসকদের আদৌ ইতিবাচক কোনো অবদান আছে কী? প্রোডাক্টিভিটির নামে তো তারা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অপচর্চা করেছেন। মহান স্রষ্টা তো মানববান্ধব করে আমাদের প্রিয় পৃথিবীটা সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু সভ্যতার তথাকথিত শাসকদের অপশাসনে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি হয়েছে, জীববৈচিত্র্যে ধস নেমেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বন্টন সংকটে পৃথিবীতে দারিদ্র্য বাড়ছে। আর ভূরাজনীতির দানবীয় তৎপরতায় বিভিন্ন দেশের এবং নাগরিকদের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। এমন সভ্যতা মানুষের ঘৃণার বিষয়ে পরিণতি হচ্ছে। সভ্যতার শাসকরা, পারমাণবিক অস্ত্রের মালিকরা কি বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম নন? এখনো সময় আছে, চোখ খুলুন, হৃদয়কে উন্মুক্ত করুন।