পুষ্টির অভাব মেটাতে দুধের জুড়ি মেলা ভার। দুধের উপকারিতার শেষ নেই। দুধ মানুষের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। অন্যান্য খাদ্যগ্রহণে সক্ষম হয়ে ওঠার আগে এটিই হল মানব শিশুসহ স্তন্যপায়ী শাবকদের পুষ্টির প্রধান উৎস। আবার বিভিন্ন বয়সীদের জন্য এটি উত্তম খাদ্য ও পানীয়। কিন্তু এ দুধ এখন ভোক্তাদের দিক থেকে বেশ দমি দ্রব্য হয়ে উঠেছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে প্যাকেটজাত তরল দুধের লিটার এখন সর্বনিম্ন একশত টাকা। কোথাও কোথও আরো বেশি। আর গরুর দুধ গোয়ালার কাছ থেকে বা বিভিন্ন খামার থেকে লিটার প্রতি আরো বেশি দামে কিনতে হয়।
আবার যারা গরু পালন করে দুধের যোগান দেন তাদের দিক থেকেও এন্তার অভিযোগ রয়েছে। গোয়ালারা বা খামারিরা দুধ বিক্রি করেন বেশ কম দামে এমন খবরও পাওয়া যায়। তারা দুধের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। বিষয়টি উঠে এসেছে সহযোগী দৈনিকের সংবাদে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত ‘দুধের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে জাতীয় নীতি প্রয়োজন’ শীর্ষক খবরে বলা হয়েছে, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি খাতের টেকসই উন্নয়নে দুধের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে একটি জাতীয় নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘খামারিরা অত্যন্ত পরিশ্রম করে গরু পালন করছেন অথচ একদিকে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অন্যদিকে গবাদিপশুর খাদ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব সমস্যার টেকসই সমাধানে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ এবং খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’ ৫ জুলাই বিকেলে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া গ্রামে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)-এর পোতাজিয়া ডেইরি পিজিতে ক্ষুদ্র খামারি সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের একক জেলা হিসেবে সিরাজগঞ্জে যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হচ্ছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ জেলার খামারিদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।’
সহযোগী আরেকটি দৈনিকের খবর, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বিভিন্ন বাজারে খাবার দুধ বিক্রি হচ্ছে পানির চেয়েও কম দামে। সুষম খাদ্য হিসেবে পরিচিত প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫-৩০ টাকায়। যা বাজারের বোতলজাত লিটার পানির চেয়েও ১০-১৫ টাকা কম। বাজারে দুধের সরবরাহ বেশি এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক খামারিই এখন বাধ্য হয়ে কম দামে দুধ বিক্রি করছেন। অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে খামারিরা।
আমরা মনে করি উপদেষ্টার উপরোক্ত বক্তব্যে বেশ সারবত্তা রয়েছে। বাজারের চিত্রটিও স্পষ্ট। আমরা এটাও মনে করি দাম নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সরকারেই কর্তব্য। উপদেষ্টা বিষয়টির উপর দৃষ্টি দিয়ে সমস্যাটি বা প্রয়োজনটি চিহ্নিত করেছেন । এখন সরকারেই উচিত হবে সে আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উপদেষ্টা বলেছেন, সিরাজগঞ্জে দুধ সংগ্রহকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে-যাতে এ অঞ্চলের খামারিরা সহজে দুধ সংরক্ষণ ও বিপণনের সুবিধা পান। খাদ্য ব্যয়ের চাপ কমাতে গবাদিপশুর জন্য ঘাসভিত্তিক খাদ্য ব্যবহারে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ঘাসের চাষ বাড়ালে খামারিদের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হবে। গরুর খুরা রোগ প্রতিরোধে দেশের চারটি জেলার মতো সিরাজগঞ্জেও ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চালু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ উদ্যোগের ফলে খামারিরা খুরা রোগজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন এবং উৎপাদন আরও বাড়বে। এসব উদ্যোগ গৃহীত হলে তা সবার জন্যই মঙ্গলজনক।
আমরা মনে করি দুধ উৎপাদন, বাজারজাত করণে অনিয়মগুলো দূর করে ভোক্তাদেরকে কম দামে যেমন দুধ সরবরাহ করা সম্ভব তেমনি গাভী পালক ও খামারীদেরও বঞ্চনা থেকে রেহাই দেয়া সম্ভব। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বিষয়টির ওপর আশু নজর দেয়ার আহ্বান জানাই।