DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ কাম্য নয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন মেয়াদে শপথ গ্রহণের পর বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর একের পর এক নতুন ও বিতর্কিত অধ্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে রীতিমত আলোচনায় রয়েছেন।

Printed Edition
Default Image - DS

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন মেয়াদে শপথ গ্রহণের পর বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর একের পর এক নতুন ও বিতর্কিত অধ্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে রীতিমত আলোচনায় রয়েছেন। একই সাথে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ব রাজনীতিও। অভিযোগ উঠেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম বিশ্ব বাণিজ্যকে উস্কে দিচ্ছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শতকরা ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপের এ বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বহু বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বড় ধরনের অবনতি হতে শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), চীন, কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিলসহ বিশ্বের আরো কিছু দেশ।

ইইউ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শত শত কোটি ইউরো মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছে। চীনও দেখিয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। বিবিসির খবরে বলা হয়, নিজের দেশের স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের উৎপাদন বৃদ্ধির আশা নিয়ে ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্রিল ও অ্যালুমিনিয়াম সবচেয়ে বেশি সরবরাহকারী দেশের মধ্যে রয়েছে কানাডা, মেক্সিকো ও ব্রাজিল। ট্রাম্পের এ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ২৬০০ কোটি ইউরোর মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এমনটি নিশ্চিত করেছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরশুলা ভন ডার লিয়েন।

তিনিই যথোপযুক্ত পন্থায় মার্কিন সব পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যদি বাইরে থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে তাহলে শতকরা ২৫ ভাগ শুল্ক দিতে হবে। এ বিষয়ে চীন প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, তাদের নিজেদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে চীন। অন্যদিকে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনহীন বিশ্ব বাণিজ্যের’ কড়া সমালোচনা করেছেন বৃটেনে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর আগে চীনা পণ্যের ওপর সরাসরি শুল্ক দ্বিগুণ করে শতকরা ২০ ভাগ করেন।

বেইজিংও এ সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। সে ব্যবস্থার অংশ হিসাবেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিজপণ্য টার্গেট করে মুরগি, গরুর গোস্ত, শূকরের গোস্ত, গম এবং সয়াবিনের ওপর শতকরা ১০ ভাগ থেকে ১৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করে।

এ বিষয়ে বৃটেনে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার রাফ গুডালে বিবিসির ‘টুডে প্রোগ্রামে’ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের বাণিজ্যকে আইনহীন করে তুলছেন। তার ভাষায়, নিজের জনগণের ওপর এর প্রভাব সীমিত রাখার চেষ্টা করছে কানাডা সরকার। প্রাপ্ত তথ্যমতে, কানাডা থেকে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করেছে ৬০ লাখ টন স্টিল। অবশ্য কোন কোন অর্থনীতিবিদ বলছেন ভিন্নকথা। তারা দাবি করছেন, শুল্ক আরোপ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পকে সমৃদ্ধ হতে সহায়তা করবে। কিন্তু তাতে সার্বিক অর্থনীতিতে বড় আঘাত আসবে। তবে যে যাই বলুন না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক তার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নীতিকে মূল্যবান হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি মনে করেন, মার্কিনিদের কাছে এ যাবৎ যা আসছে তার মধ্যে এসব নীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে বৃটেনের লিবারেল ডেমোক্রেট ডেপুটি নেতা ডেইজি কুপার বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া উচিত বৃটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী জনাথন রেমন্ডের। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন, অন্যপক্ষ বার বার আঘাত করছে। তার ভাষায়, যথেষ্ট হয়েছে। আমাদেরকে শক্তিশালী হতে হবে। বৃটিশ স্টিলের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে বৃটিশ অর্থনীতিতে। যা সময়ের দাবি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি অ্যালুমিনিয়াম সরবরাহ করে কানাডা। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা অ্যালুমিনিয়ামের শতকরা ৬০ ভাগই আসে কানাডা থেকে। ওদিকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করে পণ্য প্রস্তুতকারক মার্কিন কোম্পানিগুলো সতর্ক করেছে। তারা বলেছে, শুল্ক আরোপের ফলে তাদের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ইউকে স্টিলের পরিচালক গ্যারেথ স্ট্যাসি বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কনীতি চরম হতাশার। তার বোঝা উচিত যে, আমরা তার বন্ধু, শত্রু নই। অন্যদিকে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের জবাবে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবেন। ইউরোপিয়ান কমিশন ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের গভীর নিন্দা জানিয়েছে। ব্যবসার জন্য এ শুল্ক খুব নেতিবাচক সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। ভোক্তাদের জন্যও হবে খুবই খারাপ। শুল্ক আরোপের ফলে সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হবে। অর্থনীতিতে দেখা দেবে অনিশ্চয়তা। যা কেউ আশা করে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ব রাজনীতিতে স্বাভাবিকভাবে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পণ্য আমদানীতে শুল্ক আরোপের পর তা বাণিজ্যযুদ্ধকে উস্কে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, অন্যরাও একই পথ অনুসরণ করায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় বিশ্ব বাণিজ্যকে স্থিতিশীল রাখতে অবিলম্বে চলমান এমন বাণিজ্য যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত। এ বিষয়ে সকল পক্ষকেই সংযমী ও প্রজ্ঞাবান হওয়া দরকার। অন্যথায় এ অনাকাক্সিক্ষত বাণিজ্যযুদ্ধ কোন পক্ষের জন্যই ইতিবাচক হবে না।