পারমাণবিক অস্ত্র, বোমা এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো কেন? ধ্বংস ক্ষমতার জন্যই কি বিষয়টা এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে? যে রাষ্ট্র যত ক্ষমতাবান, তার পারমাণবিক অস্ত্রের বহরও তত বেশি। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপরি) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে আণবিক বোমার চেয়েও বহু শক্তিশালী ১২ হাজারের বেশি পারমাণবিক বোমা আছে। যার প্রায় ৯০ শতাংশই রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। অর্থাৎ ধ্বংসযজ্ঞে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী বড় বড় পরাশক্তি। তাহলে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার কোথায় যাবে? বিশ্বশান্তির বিষয়টিকে কি বনবাসে পাঠাতে হবে? আগস্ট আসলে আণবিক ও পারমাণবিক বোমার আলোচনা হয় বিশেষভাবে। কারণ, ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা নগরে প্রথমবারের মতো আণবিক বোমা হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে অন্তত ৭৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বোমার প্রভাবে। এর তিনদিন পর নাগাসাকিতে আর একটি বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে অন্তত ৭৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু বোমা হামলায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র আজ পর্যন্ত জাপানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায় নি।

বর্তমান হিরোশিমায় প্রায় ১২ লাখ মানুষ বসবাস করেন। তাদের অনেকের কাছেই বোমা হামলার স্মৃতি এখনো জীবন্ত। হামলার ৮০ বছর পূর্তিতে মানুষ স্মৃতিসৌধে গিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ৬ আগস্ট ভোরের আলো ফোটার আগেই বোমা হামলায় স্বজন হারানো মানুষেরা প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করেন। তাদের একজন ইয়োশি ইয়োকোয়ামা। নাতির সঙ্গে হুইলচেয়ারে করে অনুষ্ঠানে এসেছেন। ৯৬ বছর বয়সী এ নারী সাংবাদিকদের জানান, তার মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা বোমা হামলার শিকার হয়ে মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘বোমা হামলার কয়েকদিন পরেই আমার দাদা মারা যান। আমার মা-বাবা দু’জনেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও মারা গেছেন। আমার স্বামী যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে, তাদের আর দেখতে পাননি। মানুষ এখনো ভুগছে।’ হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কের অনুষ্ঠানে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছেন, যেসব অস্ত্র হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে এনেছিল, সেগুলোকেই আবারও বলপ্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে হিরোশিমা শহরের মেয়র কাজুমি মাতসুই হিরোশিমা ও নাগাসাকির ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে এমন একটি বিশ্বাস গড়ে উঠেছে যে, নিজের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে পারমাণবিক অস্ত্র রাখা অনিবার্য। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্স ইনস্টিটিউট (সিপরি) গত জুন মাসে সতর্ক করে বলেছিল, ‘অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কাঠামোগুলো মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। একটি বিপজ্জনক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী নয়টি দেশের প্রায় সবাই তাদের অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’ পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার কথা তারা যেন ভুলে গেছেন। তবে কি বিশ্বনেতৃত্ব আরেকটি হিরোশিমা উপহার দেওয়ার পথেই হাঁটছেন? যে নৈতিকতার গুণে মানুষ অন্য প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ, সেই গুণটাই কি বিশ্বনেতৃবৃন্দ বিসর্জন দিয়ে ফেলেছেন?