এক সময় বিকেল মানেই ছিল মাঠে ছুটে যাওয়া। পাড়া-মহল্লার খেলার মাঠগুলোতে ছিল কিশোরদের প্রাণের স্পন্দন। কিন্তু আজ শহরজুড়ে সে দৃশ্য ক্রমশ বিলীন হতে চলেছে। কোথাও মাঠের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে বহুতল ভবন, কোথাও বানানো হয়েছে মার্কেট, কোথাও আবার চলছে পার্কিং ব্যবসা। তারপর আমরা মুখে হাত দিয়ে বলি-“এ প্রজন্ম তো মোবাইল ছাড়া চলেই না!” প্রকৃত সত্য হলো তাদের কাছ থেকে মাঠ কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আর এখন সুশীল সমাজ বিস্ময় প্রকাশ করছে কেন তারা পর্দায় মুখ গুঁজে থাকে! ঢাকাসহ বড় বড় শহরে এখন যেসব মাঠ টিকে আছে, সেগুলোর বড় অংশই ‘ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য সংরক্ষিত’। উন্নয়ন যেন এক মহা-অভিযান, যেখানে শিশুর খেলার জায়গাও একটা “অব্যবহৃত সম্পদ” বলে বিবেচিত হয়। তারা এটা শুনে বড় হয়েছে।

বিকেলের খেলাধুলা সময়ের অপচয়, টিউটরের কাছে বসে পড়া অনেক বেশি জরুরি। তারাও সে কথা শুনে মাঠ ছেড়ে চলে গেল পড়ার টেবিলে। এরপর যখন সে মাঠগুলো ফাঁকা হলো, তখন মুরুব্বিদের চোখে সেটি হয়ে উঠল সম্ভাবনার জমি। মাঠের জায়গায় উঠল ফ্ল্যাট, কমার্শিয়াল স্পেস, শপিং মল। কিন্তু প্রশ্ন হলো-জীবন কি কেবল পড়া আর কাজ? বিনোদন নেই তো মানুষ হাপিয়ে ওঠে। যখন সুস্থ বিনোদনের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন মানুষ বিকল্প খোঁজে। আর তরুণ প্রজন্মের সে বিকল্প হয়ে ওঠে মোবাইল গেম, সোশ্যাল মিডিয়া, কিংবা সম্পর্কের আগুনে পুড়ে ফেলা একাকীত্ব। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে কিশোর গ্যাং কিংবা মাদকাসক্তিতে। আর তখন সমাজ উদ্বিগ্ন হয়ে বলে-“ছেলেমেয়েগুলো দিনদিন অশান্ত হয়ে উঠছে!”

আমরা ভুলে যাই, একটা প্রজন্ম আচমকা এমন হয়ে ওঠে না। তাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, আর রাষ্ট্রের নীতির ফলেই তৈরি হয় এই বাস্তবতা। আর তাই শুধু তরুণদের দোষ না দিয়ে, নিজেদের দিকেও তাকানো জরুরি। যদি এ প্রজন্মকে সঠিক পথে রাখতে হয়, তবে প্রথম কাজ হওয়া উচিত তাদের ফেরত দেওয়া একটুখানি খোলা জায়গা একটা মাঠ, কিছুটা আকাশ, আর প্রাণ খুলে দৌড়ানোর স্বাধীনতা। খেলাধুলা কেবল শরীর চর্চা নয়, এটা আত্মবিশ্বাস গড়ার জায়গা, চরিত্র তৈরির কারখানা।

তরুণ প্রজন্মকে মোবাইল থেকে বের করতে হলে, তাদের সামনে বিকল্প দিতে হবে। শুধু নিষেধ করে বা সমালোচনা করে কোনো লাভ নেই। ফিরিয়ে দিতে হবে সে মাঠ, সোনালী বিকেল, যে বিকেলে তারা শিখবে কীভাবে দল গড়ে খেলতে হয়, হার-জিত মেনে নিতে হয়, আর একে অপরকে সম্মান করতে হয়। সমাজ যখন মাঠ তুলে নেয়, তাই ফেরত দিতে হবে তাদের মাঠ, মন আর আগামীদিনের বিশ্বাস।

-ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন

শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ।