পাঠকের অভিমত
মত অভিমত
অশ্লীলতা ও অবক্ষয়
বর্তমান যুগে অশ্লীলতার প্রভাব তরুণদের উপর একটি জটিল এবং গভীর প্রভাব ফেলছে। টেকনোলজির অগ্রগতি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে অশ্লীল উপকরণের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তরুণদের মানসিক ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। বিশেষ করে, এ অশ্লীল উপকরণের সংস্পর্শ তাদের নৈতিকতার প্রতি ধারণা,
Printed Edition
মাহমিয়া আলম শান্তা
বর্তমান যুগে অশ্লীলতার প্রভাব তরুণদের উপর একটি জটিল এবং গভীর প্রভাব ফেলছে। টেকনোলজির অগ্রগতি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে অশ্লীল উপকরণের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তরুণদের মানসিক ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। বিশেষ করে, এ অশ্লীল উপকরণের সংস্পর্শ তাদের নৈতিকতার প্রতি ধারণা, আচরণ এবং মনোভাবের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যা অনেক সময় তাদের জীবনের বড় ধরনের অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পিউ রিসার্চ সেন্টার (২০২৩)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ৮৫% ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অশ্লীল উপকরণ দেখেছে এবং এর মধ্যে ৩০% তরুণ দাবি করেছে যে তাদের শারীরিক সম্পর্ক এবং যৌন ধারণা অশ্লীল উপকরণের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অশ্লীল উপকরণের সংস্পর্শের ফলে তরুণদের যৌন আচরণে অনেক সময় অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে। দ্যা অ্যাটলান্টিক (২০২৫)-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে যে, যারা অশ্লীল উপকরণ ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে যৌন আচরণ এবং প্রত্যাশা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয় (গবেষণার শিরোনাম: “ইন্টারনেট যৌন গবেষক আইলা”)। তারা শালীনতার প্রতি আগ্রহ হারাতে পারে এবং যৌনতার প্রতি বিকৃত ধারণা তৈরি হয়। এ পরিবর্তনগুলির প্রভাব তাদের মানসিক এবং সামাজিক জীবনে সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
তবে, এ প্রভাব সব তরুণের উপর সমানভাবে পড়ে না। সামাজিক পরিবেশ, শিক্ষা, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলির প্রভাবেও তরুণদের আচরণ গঠিত হয়। যেমন, আন্তর্জাতিক আইনশাস্ত্র বিষয়ক গবেষণা জার্নাল (২০২৩)-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, অশ্লীল উপকরণের সহজলভ্যতা এবং তার পরবর্তী প্রভাব সামাজিক ও আইনি কাঠামোর উপর অনেকটা নির্ভরশীল (গবেষণার শিরোনাম: “অশ্লীলতার আইন সংক্রান্ত বিশ্লেষণ”)। সমাজের আইনি কাঠামো এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি এই প্রভাবগুলোকে আরও জটিল করে তোলে। জার্নাল অব ইয়্যুথ স্টাডিজ (২০২২)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পরিবারের নৈতিক শিক্ষা এবং নির্দেশনা পায়, তাদের মধ্যে অশ্লীল উপকরণের প্রভাবে নৈতিক অবক্ষয়ের হার ৪৫% কম থাকে।
এছাড়া, অশ্লীলতার সংজ্ঞা বিভিন্ন দেশে এবং সংস্কৃতিতে ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, ‘মিলার বনাম ক্যালিফোর্নিয়া’ মামলার মাধ্যমে অশ্লীলতার আইনগত সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা এখনও বিভিন্ন দেশে বিতর্কের কারণ। ডিজিটাল কমন্স লিবার্টি ইউনিভার্সিটি (২০২৪)-এর এক গবেষণায় এই মামলার বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং কীভাবে এটি তরুণদের উপর প্রভাব ফেলেছে তা তুলে ধরা হয়েছে (গবেষণার শিরোনাম: “মিলার বনাম ক্যালিফোর্নিয়া মামলা বিশ্লেষণ”)। আইনি কাঠামোর মাধ্যমে অশ্লীলতার সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত হলেও, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে তরুণদের উপর এর প্রভাবের মাপ বিভিন্ন হতে পারে। এ মামলার পর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৬০% রাজ্য এমন আইন চালু করেছে যা যৌনতার সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করে, যার ফলে অশ্লীলতার প্রভাব তরুণদের উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
অতএব, এটি স্পষ্ট যে অশ্লীলতার সংস্পর্শ তরুণদের নৈতিকতার উপর গভীর প্রভাব ফেলে, তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। তরুণদের আচরণ ও মূল্যবোধ গঠনে অনেকগুলো উপাদান একসাথে কাজ করে। পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষার প্রভাব এবং সামাজিক আদর্শগুলি এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ক্ষেত্রে, তরুণদের স্বাস্থ্যকর মানসিকতা এবং নৈতিকতা গড়তে আরও আন্তঃবিষয়ক গবেষণা প্রয়োজন। সঠিক দিকনির্দেশনা এবং নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হলে তরুণদের মধ্যে এই ধরনের অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
অর্থাৎ, অশ্লীলতার প্রভাব থেকে তরুণদের রক্ষা করতে হলে শুধু আইনি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে নৈতিক শিক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সবারই দায়িত্ব রয়েছে।
লেখক : শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।