হামদুল্লাহ আল মেহেদী

গ্রাম বাংলার মেহনতী জনগোষ্ঠীর ভালোবাসায় মুগ্ধ নদীমাতৃক বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষ। তাঁদের সহজ-সরল জীবন যাপনের কতো গল্প উপন্যাস কবিতা সিনেমা আমরা পড়েছি দেখেছি। কিন্তু উপলব্ধিতে কোন বাঁশি বাজে তা শুধু নিজেই জানি। গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতির সুফল ভোগ করে ইঁট-পাথরের শহরের মুখোশধারী বিলাসী মানবসমাজ। সময় এসেছে শহরের অলস শোষিত মানুষের হাত থেকে অধিকার আদায় করার। জুলাই বিপ্লব শুধু সরকার হঠানো বিপ্লব নয়। এ বিপ্লব সকল বৈষম্য দুর করে ইনসাফ কায়েমের, শহীদদের আকাক্সক্ষা পুরনের। এ লক্ষ্যে আমি আজ আলোকপাত করবো ব্যাংক-বীমা নিয়ে।

ব্যাংক ও বীমা একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ। একটা সময় এ দু’টি খাত আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শক্ত ভিত্তির উপর ছিলো। কোন কোন গবেষক প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংক-বীমা বেশি বললেও আমি একমত নই। আমাদের অর্থনীতির আকার, জনসংখ্যা ও কর্মক্ষমতা হিসেবে এ খাত যথেষ্ট সম্ভাবনাময়ী। অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ থেকে বেরিয়ে আসলে ব্যাংক-বীমা’ অর্থনীতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে যথেষ্ট ভুমিকা রাখবে। এখনও গ্রামগঞ্জে ব্যাংকিং সেবা খুব একটা পৌঁছায়নি। এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপশাখা এবং ইন্সুরেন্সের এজেন্সি অফিসগুলো এ ব্যাবস্থার জন্য সহায়ক নয়। সরকারি অংশীদারির কয়েকটি বাদে গ্রামে বেসরকারি খাতের ব্যাংকের সেবা নাই বললেই চলে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগোপযোগী ও কঠোর নিয়মের আওতায় তফসীলি ব্যাংকগুলোকে আনতে হবে। একটি শহর শাখা চালুকরতে একটি গ্রামীন শাখা চালু বাধ্যতামূলক এবং গ্রামীণ শাখাগুলোর ডিপোজিটের ৮০ শতাংশ গ্রাম এলাকায় বিনিয়োগ করতে হবে।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স পিএলসি বাদে আর কোন বীমা প্রতিষ্ঠান গ্রাম এলাকায় ভালোভাবে নেই। প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে লাইফ ইন্সুরেন্স ও জেলা পর্যায়ে জেনারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানীর অফিস বাধ্যতামূলক করলে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষি খাতে উদ্বৃত্ত প্রিমিয়ামের ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করলে কোম্পানিগুলো লাভবান ও সর্বসাধারণের আস্থা আর্জন করবে।

বীমা কোম্পানিগুলোর উন্নয়ন বিভাগের কর্মী ও কর্মকর্তারা অত্যন্ত চৌকস পরিশ্রমী দায়িত্বশীল পরোপকারী মেধাবী ও উচ্চাভিলাষী হয়ে থাকে। তাঁদেরকে বীমা কোম্পানির আওতায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত করা যায় কিনা ভেবে দেখা যায়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫-২০২৬ সালকে টার্গেট নিয়ে গ্রামাঞ্চলের প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাংক-বীমায় বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করলে কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক সাবলম্বীতা, গ্রামীন জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও এ খাত দু’টি শক্ত খুঁটির উপর দাঁড়াতে পারবে এবং জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের লক্ষ পানে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাবে। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ আশা করি।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ লেবার পার্টি।