মোসা. মিশকাতুল ইসলাম মুমু

সময়ের পরিক্রমায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আজ দেশের অন্যতম একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অদৃশ্য দুর্নীতির চক্র। সর্বশেষ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড কোর্ট নির্মাণ। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সে বাজেট কমে গিয়ে এখন ‘১৩ টাকার ফুড কোর্ট’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে প্রকল্পটি-যেটি কৌতুক ও কটাক্ষের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুধু বাজেটই নয়, এখানেও দেখা গেছে চিরচেনা জবিয়ান বাস্তবতা-এক রকম নকশা দেখিয়ে আরেক রকম নির্মাণ। শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা ফুড কোর্টে মান, নকশা, অবকাঠামো সবকিছুতেই রয়েছে ব্যাপক গরমিল। এটি শুধু দুর্নীতিরই বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম অবহেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রতিচ্ছবি।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন অনিয়ম আজ নতুন কিছু নয়। যুগে যুগে প্রশাসন বদলেছে, ক্ষমতার মানুষ বদলেছে, কিন্তু বদলায়নি এ অনিয়ম আর স্বজনপ্রীতির চিত্র। ভালো মানুষ, যোগ্য প্রশাসক এলেও, একসময় এসে তারা যেন একই বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েন-যেন এটি একটি অভ্যন্তরীণ চুক্তি, যার ব্যত্যয় ঘটে না কখনোই।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পে এ ধরনের স্বচ্ছতা-হীনতা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ন করে না, বরং রাষ্ট্রের রাজস্ব অপচয় এবং তরুণ সমাজের আস্থার সংকটকেও ডেকে আনে। ফুড কোর্ট যেমন শিক্ষার্থীদের একটি মৌলিক চাহিদা মেটানোর জায়গা, তেমনি এটি হতে পারত পরিচ্ছন্নতা, সাশ্রয়ী মূল্য এবং পুষ্টির একটি রোল মডেল। অথচ বাস্তবে সেখানে শুধুই হতাশা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে এমন দুর্নীতি ও ব্যর্থতা শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। জবিয়ান শিক্ষার্থীরা চায় প্রশাসন ও সরকার এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনুক। প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক, এবং ভবিষ্যতে এমন অনিয়মের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হোক-যথাযথ তদারকি, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং সত্যিকারের জবাবদিহির মাধ্যমে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।