মৃত্যু মানে কি শরীরের সবকিছু একসঙ্গে থেমে যাওয়া? নতুন গবেষণা বলছে, তা পুরোপুরি নয়। হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেলেও কিছু সময়ের জন্য মানুষের মস্তিষ্ক (ব্রেইন) সক্রিয় থাকতে পারে। মৃত্যুর পরও মস্তিষ্কে দেখা যায় বিদ্যুৎ-তরঙ্গের নড়াচড়া—যা বিজ্ঞানীদের কাছে এক চমকপ্রদ আবিষ্কার।

সম্প্রতি Frontiers in Aging Neuroscience জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা যায়, ৮৭ বছর বয়সী এক রোগীর মৃত্যুর সময় তার মস্তিষ্কে হৃদপিণ্ড বন্ধ হওয়ার ৩০ সেকেন্ড আগে ও পরে গামা ওয়েভসহ বিভিন্ন ধরনের ব্রেইন ওয়েভ রেকর্ড করা হয়।

এই ওয়েভগুলো সাধারণত তখনই সক্রিয় থাকে, যখন মানুষ স্বপ্ন দেখে, চিন্তা করে বা স্মৃতি রোমন্থন করে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, যখন হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়, তখন শরীরে রক্ত ও অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কীয় কোষ মারা যেতে শুরু করে। তবে এই সময়ের মধ্যেই মস্তিষ্কের কিছু অংশে সংক্ষিপ্ত বৈদ্যুতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন- এসব প্রতিক্রিয়া মানে এই নয় যে মৃত ব্যক্তি তখনও সচেতন থাকে। এটি মূলত শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া মাত্র।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ড. স্যাম পারনিয়া বলেন, হৃদয় বন্ধ হলেও মস্তিষ্ক তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয় না। কিছু সময় তার কোষগুলো বেঁচে থাকে, এমনকি কিছু স্মৃতি বা চেতনার সাড়া দিতে পারে-যদিও খুব অল্প সময়ের জন্য।

অন্যদিকে, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর কয়েক মিনিট পর্যন্ত মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পাওয়া যায়, এরপর ধীরে ধীরে তা পুরোপুরি নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞান এখনো পুরোপুরি জানে না, মৃত্যুর পর চেতনা বা অনুভূতি আদৌ কতক্ষণ থাকে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় — মৃত্যুর পরও মানুষের মস্তিষ্ক তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হয় না, বরং কিছু মুহূর্ত “জীবন ও মৃত্যুর সীমারেখায়” সক্রিয় থেকে যায়।