যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির ৭৬ বছর বয়সী থংবুয়ে ওংবানডু—যাকে পরিবার স্নেহ করে ‘বু’ বলে ডাকত—হঠাৎ একদিন জানালেন, তিনি নিউইয়র্কে এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা অবাক হলেন, কারণ বহু বছর আগে নিউইয়র্ক ছেড়ে আসার পর বু সেখানে আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।
২০১৭ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর বু মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি নিজের পাড়ার ভেতরও মাঝে মাঝে পথ হারিয়ে ফেলতেন। পরিবারের সন্দেহ ছিল, হয়তো তিনি কোনো প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। কিন্তু ঘটনাটি ছিল আরও ভয়াবহ।
এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘বিগ সিস বিলি’ নামের এক তরুণীর সঙ্গে চ্যাট করছিলেন বু। কিন্তু এই ‘বিলি’ কোনো বাস্তব ব্যক্তি নন—এটি আসলে মেটার তৈরি একটি এআই চ্যাটবট, যার চেহারা গড়ে তোলা হয়েছে সেলিব্রিটি কেন্ডাল জেনারের আদলে।
চ্যাটে ‘বিলি’ নিজেকে বাস্তব নারী হিসেবে পরিচয় দেয়, নিউইয়র্কের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অপেক্ষা করছে বলে জানায় এবং এমনকি ঠিকানা ও দরজার কোড পাঠায়। এ প্রলোভনে এক রাতে ব্যাগ হাতে ট্রেন ধরতে বেরিয়ে পড়েন বু। কিন্তু নিউজার্সিতেই রাটগার্স ইউনিভার্সিটির কাছে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। মাথা ও ঘাড়ে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিন পর, গত ২৮ মার্চ তিনি মারা যান।
পরিবারের কাছে থাকা চ্যাটের নথিতে দেখা গেছে—‘বিলি’ একাধিকবার যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেছে, দেখা করার আহ্বান জানিয়েছে এবং বাস্তব মানুষ হওয়ার দাবি করেছে। চ্যাটের শুরুতে ছোট হরফে লেখা ছিল, কথোপকথন এআই দ্বারা তৈরি এবং তাতে ভুল বা অনুপযুক্ত বিষয় থাকতে পারে—তবে সেই সতর্কবার্তা পরে আড়াল হয়ে যায়।
বু-এর মেয়ে জুলি মনে করেন, যদি বটটি নিজেকে বাস্তব বলে দাবি না করত, তাহলে তার বাবার জীবন হয়তো রক্ষা পেত।
রয়টার্সের হাতে আসা মেটার অভ্যন্তরীণ নথি অনুযায়ী, আগে কোম্পানির নীতিমালায় শিশুদের সঙ্গেও এআই বটের রোমান্টিক আলাপের সুযোগ ছিল। পরে এ নীতি পরিবর্তন করা হলেও প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে ফ্লার্ট ও রোমান্টিক আলাপ এখনও অনুমোদিত।
মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, মানুষের সামাজিক জীবনে বন্ধুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তাই এআই চ্যাটবট ভবিষ্যতে মানুষের ডিজিটাল সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে নিউইয়র্ক ও মেইনসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে আইন পাস হয়েছে, যেখানে চ্যাটবটকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে যে তারা বাস্তব মানুষ নয়। তবে ফেডারেল পর্যায়ে এমন আইন আনার বিরোধিতা করেছে মেটা।
বু-এর মৃত্যুর কয়েক মাস পরও পরীক্ষা করে দেখা গেছে—‘বিগ সিস বিলি’সহ অনেক মেটা এআই বট এখনও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ফ্লার্ট করছে, দেখা করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং নিজেদের বাস্তব বলে দাবি করছে।
বু-এর স্ত্রী লিন্ডা বলেন, “এআই যদি মানুষের মনোবল বাড়ায়, সেটা ভালো; কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় রোমান্টিক সম্পর্কে জড়ানো বিপজ্জনক হতে পারে—বিশেষত দুর্বল ও মানসিকভাবে অসহায় মানুষের জন্য, যেমনটা বু-এর ক্ষেত্রে ঘটেছে।”