লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক (সাবেক)
মহান আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ জাতি।এরা সব সময় স্বাধীন থাকতে পছন্দ করে।তবে সবাই স্বাধীনতা ইচ্ছে করলে পায় না। ১৯৭ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতা ছিল গর্বের। স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে নানা মিথ্যাচার থাকলেও বাঙালি জাতি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছিল। তবে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পেয়েছি ছাত্র, আমজনতার জুলাই ২৪ বিপ্লবের মাধ্যমে। স্বৈরাচার দলবল নিয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের গর্ব হলো ছাত্র ছাত্রীরা ও আমজনতা। এ বিপ্লবে , অন্য কোন দেশের অংশীদারিত্ব নেই, একদম খাঁটি আমাদের, শত্রু ছিল চরম স্বৈরাচারী ও মানবতাবিরোধী শক্তিশালী দানব বাহিনী। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে মুক্তি চেয়েছে সমগ্র জাতি। ১৫ বছর পর মুজলুম জনগণের কথা আল্লাহ শুনেছেন। সকল রাজনৈতিক দল মুক্তির জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে অবশেষে ছাত্র ছাত্রীরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
স্বাধীনতা-উত্তর আমরা কোন সূচকে উন্নত করতে পারিনি। শেখ মজিবুর রহমান পুরো স্বাধীনতার কৃতিত্ব একা দাবিদার হয়ে যান। উনি ভুলে যান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ জিয়া, জেনারেল ওসমানী, আওয়ামী নেতা তাজুউদদিনদের ভূমিকা। স্বাধীনতা পর আনুমানিক ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করা হয়। ভারত হয়ে উঠে আমাদের নূতন প্রভু। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু তরুণ মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার মসনদ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে চিরতরে সরিয়ে দেন। জাতি মিষ্টি বিতরণ করে এ প্রশান্তির উৎসব উদযাপন করে।
এরপরে সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদ জিয়ার আগমন। দেশে চর্চা শুরু হয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের। ভারতের ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের হারাতে হয় শহীদ জিয়াকে। এরপরে শুরু হয় জেনারেল এরশাদের শাসন আমল, ৯ বছর পর গণতন্ত্র ফিরে আসে। তবে এই গণতন্ত্র ধারাবাহিকতায় লগি-বৈঠার হত্যাযজ্ঞে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। ভারত প্রত্যক্ষভাবে আমাদের দেশের রাজনীতিতে অনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ শুরু করে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার শাসন আমলা শুরু হয়। ক্ষমতায় এসে কিভাবে অবৈধভাবে আজীবন ক্ষমতায় থাকা যায় তার পরিকল্পনা হতে থাকে। এই চেতনার ধারাবাহিকতায় দুই মাসের মধ্যে প্রথমে তিনি ২০০৯ সালের সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর ম্যাসাকার করেন। এতে আমাদের ৫৭ জন সেনা অফিসার নিহত হয়, এই ধামাকা থেকে সেনাবাহিনী আজও উঠে দাঁড়াতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ও ভারত মিলে এদেশের সেনাবাহিনী ধ্বংস করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে থাকে। পরের বছর ২০১০ সালে শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টে বসবাসরত খালেদা জিয়াকে অবৈধভাবে ঢাকা সেনানিবাসের নিজ বাসা থেকে টেনে হেঁচড়ে বের করে দেন ।তারপরে শুরু হয় নতুন হিসাব নিকাশ। হেফাজত আন্দোলনে শাপলা চত্বরে রাতের অন্ধকারে গুলী ছুড়ে অসংখ্য ধর্মীয় নেতাও অনুসারিদেরকে হত্যা করেন। শুরু হয় নতুন সমীকরণ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সৃষ্টি করা হয়েছিল তা তিনি বাতিল করে দেন ।
২০১৪ সালে নিজের মত করে উনি নির্বাচন করেন। এ নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য অনেক দল যোগদান করে নাই। কোন বিরোধী প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ১৫৪ আসন পেয়ে যায়। অবৈধ ক্ষমতার বৈধতা দিতে তিনি শুরু করেন জঙ্গি নিধন অপারেশন। নিরীহ জনগণকে হত্যা করে অসংখ্য জঙ্গি নাটক উনি সৃষ্টি করেন এবং পশ্চিমাদের কাছে প্রমাণ করেন উনি এদেশের জন্য যোগ্য শাসক। ভারত একই সুরে কথা বলতে থাকে।
আমরা কেমন ছিলাম শেখ হাসিনার ১৫ বছর তার কিছু বর্ণনা দেওয়া হলো। উনি প্রথমে সেনাবাহিনী ধংস করেন প্রতিষ্ঠিত করেন স্বজনপ্রীতি । সেনাবাহিনীতে চুরি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড বৈধতা দেন।প্রতিষ্ঠিত করেন অযোগ্যদের । ভারত প্রেমী ও আস্থাভাজন অযোগ্য ও দলীয় অনৈতিক জেনারেলদের সেনাপ্রধান বানান । সেনাবাহিনী সদস্যদের অন্যান্য বাহিনী তে থাকার সময় কৌশলে খুনি বানান ও তাদের পুরষ্কিত করেন। আস্তে আস্তে সশস্ত্র বাহিনী মূল্যবোধ ও নৈতিকতা দেশপ্রেম ধ্বংস হয়ে যায়। শেখ হাসিনা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তর তথা ডিজিএফ আইকে সম্পূর্ণভাবে কলঙ্কিত করেন। যে ডিজিএফ আই, এনএসআই হওয়ার কথা ছিল আমাদের আস্থার স্থান সেটা হয়েছে আতঙ্কের জায়গা। এই স্পর্শ কাতর গর্বের সংস্থাগুলোকে ব্যাংক দখল, প্রতিষ্ঠান দখল, ভয়-ভীতি আতঙ্ক ছড়িয়ে দেশকে নৈরাজ্যে পরিণিত করেন। তার ইশারায় অসংখ্য নিরীহ জনগণকে ভারতে পাঠিয়ে বন্দী করে রাখেন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ও আমাদের গোয়েন্দারা মিলে সকল অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করতো। গোয়েন্দা ও শৃঙ্খলা বাহিনী হয়ে যায় অবৈধ সরকারের লাঠিয়াল। শেখ হাসিনা মনে করতেন বাংলাদেশ তার পৈত্রিক সম্পত্তি, বাবার জমিদারি। অতীতে একজন জমিদার যেভাবে জুলুম করতেন শেখ হাসিনা তার চেয়ে বেশি করতেন। এমনকি হিটলার যা করেনি শেখ হাসিনা তাই করতেন। তিনি ভাবতেন তিনি সকল আইনের উর্ধ্বে। গুমের মতো অন্যায় মানবাধিকার লঙ্ঘন কতটা বেদনাদায়ক তা প্রকাশ করা যাবে না। একজন লোককে গুম করার পর দীর্ঘদিন রেখে হয় তাকে মেরে ফেলা হতো, আর ভাগ্যবান যাকে ছেড়ে দেওয়া হতো সে ব্যক্তি কে একাধিক জঙ্গি মামলা দিয়ে আইনের বেড়ে জলে ফেলে দিতেন। এই ছিল শেখ হাসিনার কার্যক্রম। অসংখ্য সাধারণ নাগরিককে জঙ্গি তকমা লাগিয়ে দিতেন। দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা পরিধান করা হলো জঙ্গি লেবাস। উনি নিজেও বিশ্বাস করতেন না এরা জঙ্গি ,তার পৈশাচিক লালসা দীর্ঘায়িত করতে তথা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে এ নাটক উনি একের পর এক করে যেতেন। একটা জঙ্গি তকমা কতটা সমাজের জন্য লজ্জাকর এবং এর প্রভাব কতটা ভয়ঙ্কর তা লিখে বুঝানো যাবে না।
একজন গুম হওয়া ব্যক্তি জানেনা উনি কোথায় আছেন, কেন আছেন, কতদিন গুম থাকবেন বা কেমন আছে তার পরিবার কোন ধারণা তার ছিল না। মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা চেয়ে উনি অপেক্ষায় থাকতেন এবং নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হতেন। একইভাবে ওই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আসার অপেক্ষায় থাকে কখন তার স্বামী, ভাই ছেলে, ফেরত আসবে। শেখ হাসিনা এখানেই শুধু ক্ষান্ত হননি, তার পুলিশ বাহিনী দিয়ে ওই পরিবার থেকে টাকা নিয়ে নিঃস্ব করে দিতেন। ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের নানা রকম অত্যাচার, ভয়ভীতি, হেনস্থা করে তাদেরকে আইনের বেড়াজালে আটকে রাখতেন যাতে কোন আইনের সাহায্য না নিতে পারে। সেনাবাহিনীর ২০০৯ সালে বিডিআর ম্যাসাকার এর পর সেনাবাহিনীর অসংখ্য অফিসারকে নির্মমভাবে কারণ ছাড়া বরখাস্ত করা হয়, বহিষ্কার করা হয়, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় । আমি নিজে চাকরিরত অবস্থায় গুম হই। এরকম অনেক অনিয়ম পূর্বে কখনো ঘটেনি। এত অনৈতিক একজন শাসক কিভাবে এমন হতে পারে আমার জানা নেই। চাকরিরত অবস্থায় গুম এই সত্য ঘটনা কাউকে বোঝানো যায় না। আর কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। আমি ২০২২ সালে জুলাই মাসে নেত্র নিউজের মাধ্যমে গুমের আস্তানা ‘আয়নাঘর’ জনসমক্ষে নিয়ে আসি। জনসমক্ষে সত্য প্রচার করলে আয়নাঘর সম্পর্কে আমার বিরুদ্ধে বারোটি আইসিটি মামলা হয়। এমন মামলা ছিল যাতে অভিযোগ করা হয় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ ৫০০০০ কোটি টাকা। এখন ভাবতে হবে কোথায় ছিল আমাদের বিচার ব্যবস্থা। প্রধান বিচারপতি থেকে সকল ক্ষেত্রে দলীয় নিয়োগ যারা শুধু শেখ হাসিনার আদেশ পালন করতেন। এমনকি জোর করে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অসংখ্য লোককে মৃত্যুদণ্ড দেন। দেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনাহ কে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। ভয় আতঙ্কে জিম্মি ছিল সমগ্র দেশবাসী । কেউ তথা বিদেশিরা আমাদের কথা বিশ্বাস করত না। শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই মিডিয়ায় ছিল তার মূল হাতিয়ার, কিছু অনৈতিক সাংবাদিক যারা শেখ হাসিনার গুনগান ও প্রশংসা করতেন; সকল অনিয়মকে স্বীকৃতি দিতেন। শেখ হাসিনার পুলিশ ছিল চরমভাবে নির্মম, এরা হওয়ার কথা ছিল সেবক এরা হয়েছিল জালিম। কতটা অন্যায় অবিচার করা হতো তা বিশ্ব জানে না। হাসিনার পৈশাচিক বাহিনীর কাছে সম্মানিত নারীরা রেহাই পায় নি। আর আমরা এ অত্যাচারে অভ্যস্ত হয়ে ছিলাম আমরা পার্থক্য বুঝতে পারি ৫ আগস্টের পর।
শেখ হাসিনা সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে যা লিখে শেষ করা যাবে না।
তার মিথ্যাচারের মধ্যে ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা। এই চেতনা বিক্রি করে উনি দেশকে বিভক্ত করে ফেলেন কেউ হতো স্বাধীনতার পক্ষের বা বিপক্ষের শক্তি, ধর্মীয় নেতারা ছিলেন জঙ্গি। কোন প্রতিবাদ করার প্রতিরোধ করার কোন সুযোগ ছিল না উনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ও আমজনতা এই ভয় ভেঙে ফেলে, হাসিনার দুর্গে আতঙ্ক ভয় ঢুকে পড়ে। হাসিনা বাহিনীর ভয়ঙ্কর গোয়েন্দা, র্যাব পুলিশ, বিজিবি এবং প্রশাসন এদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে পড়ে আমাদের ছাত্র জনতা। বুক পেতে দেয় আমজনতা, টাটকা তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি নুতন স্বাধীনতা। আমরা একাত্তরে পেয়েছি একটি মানচিত্র একটি পতাকা। সত্যিকারই আমরা স্বাধীন ছিলাম না আমরা সবাই সত্যিকারের স্বাধীন হয়েছি ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর ।আমরা নির্ভয়ে কথা বলতে পারি, নিজের দাবি চাইতে পারি, অধিকার চাইতে পারি। এই অধিকার যা আমার ছিল তা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম, আমরা ছিলাম দেশের বাসিন্দা, নাগরিক ছিলাম না। আমার গর্বের নাগরিক হতে চাই ।
আবু সাঈদ রংপুরের একজন বীর ছাত্রের নাম। এ বীরত্ব কাহিনী, সাহস এবং এর রক্ত দেশকে দিয়েছে নতুন উদ্যম, নতুন গতি। একে একে
মুগ্ধ, ওয়াশিমসহ প্রায় ১৪০০ বাংলাদেশী শহীদ হয়। তাজা রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা। প্রায় ৩০ হাজারের অধিক আমজনতা আহত হয়, ৪ হাজারের মতো অন্ধ। চরম মাশুল দিতে হয় আমজনতাকে। এ রকম বিশাল ত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। স্বাধীনতার পর নতুন স্বাধীনতা নতুন ইতিহাস। বাংগালীরাই পারে অন্য কেউ নয়। শেখ হাসিনা ছাত্র, শিশু ও আমজনতার উপর সাঁজোয়া যান, মেশিন গান ব্যবহার করে বাংলাদেশের মাটি রক্তাক্ত করে। হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া হয় গুলি এতে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। একই জাতির লোক হয়ে এরকমভাবে গুলি কেউ করতে পারে না, কখনো নিরস্ত্র জনগণের উপর সশস্ত্র যোদ্ধারা
গুলি চালাতে পারে না। এটাই নিয়ম। পৈশাচিক হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে সকল চেষ্টা করতে থাকেন। নিরাপত্তা বাহিনী তথা হাসিনার পুলিশ বিপ্লবীদের লাশ পুড়িয়ে, ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা, বিভৎস আচরণ দেশ ও বহির্বিশ্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এ বিপ্লব দেশের সকল শ্রেণির আমজনতার মনে দাগ ফেলে। সকল স্তরের জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। সবার কন্ঠে ছিল প্রতিবাদ ও শেখ হাসিনার পদত্যাগ। যে ভয় আমাদের দীর্ঘ ১৫ বছর তাড়া করেছিল তা ভেঙে যায়। মা বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে।এ ছিল চোখ জুড়ানো প্রতিবাদ। সবজি বিক্রেতা, রিকশাওয়ালা, পানি বিক্রেতা সবাই এক বাক্যে,” দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা” । আকাশে বাতাসে একই স্লোগান “দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ” । সমগ্র বাংলাদেশের জনতার ভাষা, “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার।”
বিবেকের কাছে সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে অস্বীকার জানায় গুলী ছুড়তে আর এটা
স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করে। গর্ব করে বলতে হয় আমাদের সেনাবাহিনী আমজনতার সাথে ছিল । দেরিতে হলেও তারা হাসিনার সঙ্গ ত্যাগ করেছে। আমাদের বিপ্লবের অংশ আমাদের সেনাবাহিনী। এই সেনাবাহিনীকে কেউ যাতে কলঙ্কিত না করতে পারে সেজন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে। ৫ আগস্ট বা ৩৬ জুলাই আমাদের জাতি ও বিশ্ববাসী সারা জীবন মনে রাখবে। দুপুর ১ টার দিকে আমি ও সহযোদ্ধারা জানতে পারি ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে। আমরা সহযোদ্ধা বি জেনারেল আজমী , ব্যারিস্টার আরমান সহ অজানা বন্দীদের মুক্ত করতে বি জেনারেল হাসান নাসিরের নেতৃত্বে রাত ৮টায় সেনানিবাসের কচুখেত চেকপোস্টে অবস্থান নেই। আমাদের সাথে ছিল অনেক অফিসার ও তরুণ। যাদের নাম মনে পড়ছে তারা লে. কর্নেল ফেরদৌস আজিজ, কূটনৈতিক ক্যাপ্টেন মারুফ জামান, ক্যাপ্টেন শোয়েব, লে. কাজল, এডভোকেট তারেক, মিনহাজ, সাংবাদিক ও অনেক গুণিজন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ এক বিরল ঘটনা। রাত ১টার পর ডিজিএফ আইও সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথোপকথন ও মুক্তি নিশ্চিত করে ফিরে আসি। সকল বন্দীরা মুক্ত হয়ে যায়। এ এক বিশাল প্রাপ্তি।
এখন সময় হলো প্রয়োজনীয় সংস্কার করার, যাতে আর কোন শাসক ফ্যাসিস্ট হতে না পারে। আমরা চাই ভারতের আধিপত্য মুক্ত বাংলাদেশ আমাদের ছাত্ররা আমাদেরকে শিখিয়েছে ভারত আমাদের এক নম্বর শত্রু, আর আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় শত্রু । আমরা আওয়ামী লীগের চিরতরে নিষিদ্ধ চাই। কোন ভালো মানুষ আওয়ামী লীগ করতে পারে না। আওয়ামী লীগের ডিএন এ তে পৈশাচিক আচরণ, সম্পদ লুট পাট ও ধর্ষণ চরিত্রে ভরপুর।
স্বাধীন দেশে আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমরা সবাই এক জাতি বাঙালি। আমাদের আছে কিছু ছোট ছোট জাতি এরা আমাদের গর্ব এবং অলংকার ।সবাইকে মিলে আমরা গর্বিত বাংলাদেশী। আমাদের নতুন দেশ হবে শান্তির দেশ যেখানে সবার জন্য থাকবে সাম্য ও ন্যায় বিচার, ভারতের আধিপত্য মুক্ত বাংলাদেশ। ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলে সম অধিকার ছিনিয়ে আনবে। ভারতকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। আমরা রক্ত দিতে জানি, রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারীদের বিতাড়িত করে স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করেছি।
ছাত্র ছাত্রীরা আমাদের গর্বের। এরা সব সময়ই চিরন্তন। বহমান নদীর স্রোত। এক জনের পর অন্য জন শূন্য স্থান দখল করে নিয়ে দায়িত্ব পালন করবে। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।