মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, বর্তমানে দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। ছোট কারণে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। সরকার সবদিক দিয়ে আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ অবস্থায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে ভয় কাজ করছে। সুষ্ঠু পরিবেশ ও লেবেল প্লেইং ফিল্ড তৈরী না করলে ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে কি না? তা নিয়েও ভাবতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

সম্প্রতি দৈনিক সংগ্রামকে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাতকারটি নিয়েছে দৈনিক সংগ্রামের স্টাফ রিপোর্টার মিয়া হোসেন। সাক্ষাতকারের বিস্তারিত নিন্মে তুলে ধরা হলো।

দৈনিক সংগ্রাম: বিপ্লবের এক বছর পূর্তি হচ্ছে ৫ আগস্ট। এক বছর নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী ?

সৈয়দ রেজাউল করীম : গত বছর ৫ই আগস্টে ছাত্র জনতা ন্যায়ের পক্ষে যখন তারা আওয়াজ তুলেছিল-তখন বাংলাদেশের ছাত্র জনতা সহ সর্বত্র এই দেশপ্রেমিকরা এর পক্ষে নেমেছিল। তখন এক পর্যায়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার এবং শেখ হাসিনা তার দায়িত্বপালন অবস্থায় প্রশাসনকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের মেধাবী ছেলেগুলোকে এবং আলেম উলামাসহ বাংলাদেশের অনেক মানুষকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করার পরিবেশ তৈরি করে। যার ফলশ্রুতিতে আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশে ৫ আগস্ট একটা অভ্যুত্থান হয়েছে। এখন আমাদের সকলের কাছে দাবি থাকবে যেসব প্রত্যাশায় এ আন্দোলন হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা।

দৈনিক সংগ্রাম: যেই প্রত্যাশা নিয়ে আন্দোলনটা হয়েছিল, সেই জুলাই বিপ্লবের প্রত্যাশা কি এখন পূরণ হচ্ছে কি না? এ বিষয়ে আপনার মূল্যায় কী?

সৈয়দ রেজাউল করীম : যে প্রত্যাশায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়েছিল এই প্রত্যাশায় এখন কিছু স্বার্থোন্মেষী মহল তাদের কার্যক্রম আমরা যা দেখছি, তাতে কিন্তু ছাত্র জনতার যে আশা আকাক্সক্ষা, প্রত্যাশা নিয়ে তারা আন্দোলন সংগ্রাম করে এত হাজার হাজার মায়ের সন্তান হারা হয়েছিল, অপহৃত হয়েছে, চক্ষু হারিয়েছে। সেটাই এখন কিছু স্বার্থোন্মেষী মহলের কার্যক্রম, তাদের কথাবার্তা এবং তাদের আচরণবিধিতে সেটা কঠিনভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা আশা করছি যে, সবাই নিজেদের ব্যক্তি এবং দলের বলয় থেকে বের হয়ে- দেশের এবং জাতির এবং মানবতার যে আশা আকাক্সক্ষা সেটা বাস্তবায়নের উপর আপনারা গুরুত্ব দিবেন এবং সে অনুযায়ী আমরা সবাই যেন একত্রিত হয়ে দেশ গঠন করতে পারি। এটাই বিশেষ করে সকলের কাছে বার্তা।

দৈনিক সংগ্রাম: বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন এই সরকারের সাফল্য ব্যর্থতা মূল্যায়ন আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?

সৈয়দ রেজাউল করীম : সরকারের ব্যাপারটা আসলে তারা হচ্ছে নির্বাচিত সরকার না। ওরা আমাদের গণ অভ্যুত্থানের পরে পরামর্শভিত্তিক এই সরকারের উপরে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. ইউনূস সাহেব আমাদের কাছে দু:খ প্রকাশ করে বলেছিল যে, আসলে ৫ই আগস্টের পরে দেশ গঠন করার একটা পরিবেশ তৈরি হয়। সেই পরিবেশেই আমি দেশ গঠন করার জন্য আসছিলাম। কিন্তু আমাকে দেশ গঠন করার সেই প্রক্রিয়া কাজে বাধা এবং আমাকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেয় না। অর্থাৎ অনেকাংশে আমরা যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছি আমাদের দেশ গঠনে সরকারকে যেভাবে সহযোগিতা করার দরকার ছিল সেভাবে সহযোগিতা করতে পারছি না বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিতরে কয়েকজন উপদেষ্টার কমবেশি ব্যর্থতা রয়েছে। এজন্য আমি বলব যে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর উভয়েরই কমবেশী সফলতা ও ব্যর্থতা রয়েছে।

দৈনিক সংগ্রাম: আগামী বাংলাদেশ গঠনের বিষয়ে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

সৈয়দ রেজাউল করীম : আগামী বাংলাদেশ গঠন করার ব্যাপারে আমরা তো বলছিলাম যে, বিগত ১৫ বছরে নির্বাচন নিয়েই মূলত ফ্যাসিবাদ তৈরী হয়েছে। দিনের ভোট রাতে হওয়া, ভোট কারচুপি হওয়া, বিভিন্ন প্রতারণা,মানুষের মধ্যে অশান্তিকর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। দেশ অশান্ত হয়েছে। এ জন্য নির্বাচনের পদ্ধতিটাও ভালোভাবে পরামর্শ ভিত্তিক সাজানো দরকার। এজন্য জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক পিআর পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেছিলাম। কিছু স্বার্থান্বেসী মহল এটিকে নানাভাবে কটুক্তি করছে। নির্বাচনের জন্য বর্তমানে যে ধরনের পরিবেশ চলছে তাতে আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করতেছে। আমরা যদি সেখানে প্রার্থী দেই, আমাদের লোকজন যদি সেখানে কাজ করে, বর্তমানে পরিবেশ দেখছি ছোট কারণে মানুষকে মেরে ফেলছে। নারায়নগঞ্জে মালিক ভাড়া চাওয়ায় পিটিয়ে মেরে ফেলছে। চারদিকে ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের কোন পরিবেশ আমরা লক্ষ্য করছি না। সবজায়গায় আইন শৃংখলা রক্ষায় সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ অবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে বড় আকারের সন্দেহ রয়েছে। নির্বাচনের জন্য আগে পরিবেশ সুন্দর করতে হবে এবং লেবেল প্লেইং ফিল্ড তৈরী করতে হবে। অন্যথায় আমরা নির্বাচনে যাব কি না? তা নিয়ে ভাবতে হবে।